ঢাকা: শুরুর শঙ্কাই ফললো শেষে। প্রাথমিকের বই নিয়ে নাটকীয়তা কম হয়নি। মঞ্চায়নের পরে দেখা গেল রঙবেরঙের প্রচ্ছদের নিচে ভূত লুকিয়ে। অভিভাবকদের ভাষ্যে, কাগজ ও ছাপা এতোই নিম্নমানের, যা নিউজপ্রিন্টকেও হার মানায়। এরকম বই দিয়ে ছোট ছোট বাচ্চারা কীভাবে এক বছর পড়াশোনা করবে?
বিনামূল্যে বিতরণ করা চতুর্থ শ্রেণির আমার বাংলা বই ও প্রাথমিক বিজ্ঞান বই দুটি হাতে নিয়ে দেখা গেল এক পৃষ্ঠায় ছাপানো ছবি অন্য পৃষ্ঠায় ছড়ানো। যার ফলে ওই পৃষ্ঠার লেখাগুলো আর ভালোভাবে পড়া যাচ্ছে না। প্রতিটি বইয়ের সুদৃশ্য মলাট ও বাইন্ডিং থাকলেও আসল জায়গায় নকলে ভরা। অর্থাৎ কাগজ ও ছাপার মানের সঙ্গে সুদৃশ্য মলাট খুবই বেমানান।
শুক্রবার সকালে ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রাথমিকের বই উৎসবে গিয়ে এরকম পরিস্থিতি দেখা যায়।
প্রাথমিকে ছোট ছোট বাচ্চারা পড়াশোনা করে। তাদের কথা মাথায় রেখে বইগুলো চার রঙে রাঙিয়ে আকর্ষণীয় করতে চেয়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবোর্ড (এনসিটিবি)। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রঙ ছড়িয়ে ছাপা লেখাই মুছে যাওয়ার উপক্রম।
কাগজ ও ছাপার মানের বেহাল দশা সম্পর্কে জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী বাংলামেইলকে বলেন, কাগজ সরবরাহ থেকে শুরু করে বই ছাপানো, পৌঁছানো ও মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে যারা আছে, তাদের চুক্তির ১৫ শতাংশ টাকা আমরা পরিশোধ করিনি। চুক্তিতে ছিল পাঠ্যবইগুলো সঠিকভাবে সময়মতো পৌঁছানো ও শতভাগ মান ঠিক থাকলে তাদের আমরা বাকি টাকা পরিশোধ করবো। রোববারে তাদের টাকা পরিশোধের কথা ছিল। আমি অলরেডি অফিসকে টাকা দিতে নিষেধ করেছি।
এখন করণীয় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু সমস্যা দেখতে পাচ্ছি, সেক্ষেত্রে করণীয় ব্যবস্থা নিতে রোববার ১১টায় আমরা আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ আসছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে পাঁচটি জেলা ভিজিট করবো। স্বরেজমিনে ভিজিট, অন্যান্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
এসব সমস্যার জন্য বিশ্বব্যাংকের খামখেয়ালিপনা ও কর্ণফুলীর কাগজ দিতে দেরি করাকে দায়ী করেন ড. সিদ্দিকী।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের প্রাথমিক, এবতেদায়ি ও মাধ্যমিকের প্রায় ৩৫ কোটি বই ছপানোর জন্য ২৯৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল। অবশ্য পরে টেন্ডাররের মাধ্যমে ৯৪ কোটি টাকা কমিয়ে ১৯৮ কোটি টাকায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে এ কাজ দেয়া হয়। এ নিয়ে প্রথমে জোরালো আপত্তি তুলেছিল দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। পাঠ্যবইয়ের মান উন্নত করার জন্য কিছু শর্তও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু টেন্ডারের নিয়ম অনুযায়ী, চুক্তি স্বাক্ষরের পর খরচ বাড়ানোর সুযোগ না থাকায়, তা কার্যকর হয়নি। তাই ছাপনো বইয়ের মান নিয়েও যে প্রশ্ন উঠেছিল তাই সত্যি হলো।
সে সময় মান কমার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ড. সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘বইয়ের মান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এনসিটিবির পাশাপাশি কন্টিনেন্টাল বিডি লিমিটেড নামের একটি মাননিয়ন্ত্রণকারী কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
কোম্পানিটি কাগজ ও ছাপার মান মনিটরিং করবে। সর্বশেষ বই বিতরণ করার পর ফিল্ড থেকে বই সংগ্রহ করে সঠিক মান সর্বক্ষেত্রে বজায় আছে কি না তা যাচাই করবে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ। এখন দেখার অপেক্ষা এনসিটিবি কীভাবে এ পরিস্থিতি সামাল দেয়।
শুক্রবার সকালে ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদালয়ে প্রাথমিকের বই উৎসব আয়োজন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধান অতিথি হিসেবে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।