গ্রাম বাংলা ডেস্ক: ঈদ মানেই আনন্দ এবং শান্তি। কিন্তু এবারের ঈদ গাজার মানুষদের জন্য কোনো শান্তি বয়ে আনেনি। ঈদের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই প্রাণ নিয়ে ছুটছেন গাজার মানুষ।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য ইসরাইলের প্রস্তুত হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করার পরপরই মঙ্গলবার গাজার বিভিন্ন লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এর মাধ্যমে ২২ দিন ধরে চলা গাজা যুদ্ধ সহসা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা মিলিয়ে গেছে। সোমবার রাত থেকে দফায় দফায় হামলা চলছে গাজার বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ করে। মঙ্গলবার ভোরে অন্তত ১৫০টি স্থানে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এতে নিহত হয়েছে ১৬ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এদের মধ্যে নয়জনই একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বাকিরা একই পরিবারের সাত সদস্য, যাদের বাড়িতে গোলা আঘাত হানে।
সোমবার গাজায় মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর পালিত হয়। ওই দিনটি হামলা বন্ধ রাখা হলেও দিনটি পার হতে না হতেই আবার হামলা শুরু হয়ে গেছে। মঙ্গলবার ভোররাতে গাজার হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার বাড়ি লক্ষ করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইসরায়েলি জঙ্গি বিমান থেকে ছোড়া ওই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কেউ হতাহত না হলেও বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছে গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে বিষয়টা খোঁজ করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
হামাসের দাবি, তাদের পরিচালিত আল আকসা টিভি ও আল আকসা রেডিও দপ্তরেও হামলা চালানো হয়েছে। হামলার পর টেলিভিশন স্টেশনের সম্প্রচার অব্যাহত থাকলেও রেডিও সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।
সোমবার রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, আমরা মিশন শেষ করবো না, গাজার সুড়ঙ্গগুলো নিষ্ক্রিয় করা না পর্যন্ত আমরা অভিযান বন্ধ করবো না, আমাদের নাগরিকদের, আমাদের শিশুদের ধ্বংস করাই এসব সুড়ঙ্গ তৈরির একমাত্র উদ্দেশ্য।
দীর্ঘমেয়াদি অভিযান চালানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত হওয়া দরকার। আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শক্তি প্রয়োগ করা অব্যাহত রাখবো আমরা।
তিন সপ্তাহ ধরে চলা এই লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ১,১২০ জন গাজাবাসী নিহত হয়েছেন যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ এবং অন্তত দুই শতাধিক শিশু। অপরদিকে ইসরাইলের পক্ষে ৫৩ জন নিহত হয়েছেন যাদের মধ্যে ৫১ জনই সেনা সদস্য।
সুড়ঙ্গের ইসরায়েলি সেনা নিহত
সুড়ঙ্গের মাধ্যমে গাজা থেকে ইসরাইলে উপস্থিত হয়ে বন্দুক লড়াইয়ে পাঁচ ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে গাজার যোদ্ধারা। সোমবার গাজা ভূখণ্ডের সীমান্তের কাছে ইসরাইলের নাহাল ওজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে হামাস।
এদিকে এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, গাজা থেকে নাহাল ওজ পর্যন্ত সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে আসা সন্ত্রাসীদের একটি হামলা প্রচেষ্টা প্রতিহত করার সময় লড়াইয়ে ওই সেনারা নিহত হয়েছেন। ৩১টি সুড়ঙ্গের মধ্যে ১৭টি তারা উড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি ইসরাইলের সেনাবাহিনীর।
বান কি মুনের আহ্বান
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুন নিউ ইয়র্কের জাতিসঙ্ঘ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ইসরাইলি সেনারা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের লিফলেট বিতরণ করছেন। কিন্তু নিজের ঘর ছেড়ে যাওয়াটা ফিলিস্তিনিদের জন্য আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি। কারণ এই বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর সাহায্য দেয়ার মতো সামর্থ্য জাতিসঙ্ঘের নেই। তিনি বলেছেন এই বিভৎস আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।
গাজায় ১৮ লাখ মানুষের বাস, যাদের মধ্যে ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষই এখন গৃহহীন হয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ।
ইসরাইলের পাশে রিপাবলিকান
পুরো বিশ্ব যখন গাজায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা ইসরাইলকে অভিযান বন্ধ করতে চাপ না দেয়ার জন্য ওবামা প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছে। কেন ওবামা প্রশাসন গাজার মানুষদের রক্ষায় পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তারও সমালোচনা করেছেন রিপাবলিকান সেনেটররা।
হাউজ স্পিকার জন বোয়েনার সোমবার বলেছেন, এখন সব মানুষ ইসরাইলকে একঘরে করে ফেলতে চাচ্ছে। আমরা চাই ইসরাইলের পাশে দাঁড়াতে, কেবল পর্যবেক্ষক হিসেবে নয়, প্রকৃত বন্ধু হিসেবে। এই সপ্তাহে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা ইসরাইলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ২২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করেন। তবে এ নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ব্যাপক মতভেদ ও বাকবিতণ্ডা হয়। গত সপ্তাহে নেতানিয়াহুর সাথে আলোচনায় ওবামা যে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন সেটারও সমালোচনা করেছেন রিপাবলিকান সেনেটররা। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, অস্ত্রবিরতি মানেই হামাস পূর্ণোদ্যমে তাদের রকেটগুলোকে স্থাপন করে ইসরাইলে হামলা শুরু করবে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুন ইসরাইলের আচরণের নিন্দা জানালে রিপাবলিকান বেশ কয়েকজন সিনেটর জাতিসঙ্ঘে একটি চিঠি লিখেছেন, যার বক্তব্য, হামাস গাজার সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সঙ্কট সমাধানের জন্য আলোচনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতার আহ্বান
ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি ইসরায়েল গণহত্যায় মেতে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন। মঙ্গলবার ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি সমগ্র মুসলিম জাতিকে ফিলিস্তিনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আহ্বান জানান।
গাজা থেকে ইসরায়েলে হামাস রকেট হামলা চালাচ্ছে-এই কথা বলে ৮ জুলাই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। পরে গাজায় হামাসের খোড়া সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়ে স্থল অভিযানে নামে ইসরাইলের সেনাবাহিনী।
সূত্র : ডয়চে ভেল।