আসন্ন নির্বাচনে ২৩৪টি পৌরসভার ১৫৬টিতেই মেয়র পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এই লড়াইয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীরাই। সমকালের ব্যুরো, অফিস, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের অনুসন্ধান এবং সরেজমিন বিভিন্ন পৌরসভা ঘুরে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
অন্য ৭১টি পৌরসভায় এগিয়ে রয়েছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন ৫৪টিতে। বিএনপি প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন ১১টিতে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন দুটিতে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি একটি, জামায়াত একটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দুটি পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে রয়েছেন।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ গতকাল দাবি করেছেন, ২০১টি পৌরসভায় তাদের মেয়র প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। এদিকে বিএনপি বলে আসছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ৮০ শতাংশ পৌরসভাতেই তাদের মেয়র প্রার্থীরা জয়ী হবেন।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে পিরোজপুর সদর, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, ফেনী সদর, পরশুরাম এবং নোয়াখালীর চাটখিলের আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এ ছাড়া চাঁদপুরের ছেংগারচর পৌরসভায় হাইকোর্টের রায়ে বিএনপির প্রার্থিতা স্থগিত থাকায় এখানেও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর মোট ২২৭টি পৌরসভার মেয়র পদে ভোটের লড়াই হচ্ছে।
এবারই প্রথম দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন হচ্ছে। মেয়র প্রার্থীরা নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পেয়েছেন। ফলে এই নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর সাজসাজ রবের পাশাপাশি দেশজুড়ে ব্যাপক কৌতূহলও ছড়িয়ে পড়েছে ইতিমধ্যে। শেষ মুহূর্তের নানা হিসাব-নিকাশের পাশাপাশি চলছে জল্পনা-কল্পনাও। শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে জিতে কোন দলের ঘরে কতগুলো পৌরসভার নেতৃত্ব যায় তা দেখার অপেক্ষায়ও রয়েছেন দেশবাসী।
মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আ’লীগ-বিএনপিই: সমকালের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে ১৫৬টিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে, তার ৮৩টিরই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীরা। আর আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে আটটিতে। আবার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে চারটি পৌরসভায়, যেখানে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থীরা অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে তিনটি পৌরসভায়। আর ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে জামায়াতের দুই, জাতীয় পার্টির তিন, এলডিপির এক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পাঁচটি পৌরসভায় জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে বিএনপির বিদ্রোহী অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, এমন পৌরসভার সংখ্যা দুটি।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের তালিকায় থাকা অন্য ৪৫টি পৌরসভার মেয়র পদে ত্রিমুখী, চতুর্মুখী অথবা বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। যেখানে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কিংবা দুই প্রধান দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। কোথাও কোথাও আবার জাতীয় পার্টি, জামায়াত, জাসদ, খেলাফত মজলিস, জনসংহতি সমিতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গেও বড় দুই দলের মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতারও আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
যেসব পৌরসভায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই: আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস রয়েছে এমন পৌরসভাগুলো হচ্ছে- ঠাকুরগাঁও সদর, রানীশংকৈল, দিনাজপুর সদর, নীলফামারীর সৈয়দপুর, লালমনিরহাট সদর, কুড়িগ্রাম সদর, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, বগুড়ার সান্তাহার, কাহালু, শিবগঞ্জ, রহনপুর, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, পাবনার ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, ঈশ্বরদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, নওগাঁ সদর, নজিপুর, রাজশাহীর কাঁকনহাট, মুণ্ডুমালা, তাহেরপুর, ভবানীগঞ্জ, তানোর, নওহাট্টা, চারঘাট, নাটোর সদর, সিংড়া, কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, হরিণাকুণ্ডু, শৈলকূপা, যশোর সদর, মনিরামপুর, কেশবপুর, মাগুরা সদর, নড়াইল সদর, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, খুলনার পাইকগাছা, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠির নলছিটি, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি, জামালপুর সদর, মেলান্দহ, ইসলামপুর, শেরপুর সদর, শ্রীবরদী, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ভালুকা, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, দুর্গাপুর, টাঙ্গাইলের মধুপুর, মির্জাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী, গাজীপুরের শ্রীপুর, মুন্সীগঞ্জ সদর, ঢাকার ধামরাই, নরসিংদীর মাধবদী, মনোহরদী, ফরিদপুরের নগরকান্দা, কিশোরগঞ্জ সদর, কুলিয়ারচর, হোসেনপুর, কটিয়াদী, বাজিতপুর, ভৈরব, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, দিরাই, সিলেটের গোলাপগঞ্জ, মৌলভীবাজার সদর, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, কুমিল্লার বরুড়া, চাঁদপুরের কচুয়া, মতলব, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, রায়পুর এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া।
আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হচ্ছে এমন পৌরসভাগুলো হচ্ছে_ দিনাজপুরের বিরামপুর, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, রাজশাহীর দুর্গাপুর, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ময়মনসিংহের গৌরীপুর, নরসিংদী সদর, শরীয়তপুরের নড়িয়া ও কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, কালাই ও সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনায়। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে লড়াই হচ্ছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, সাতক্ষীরা সদর ও বান্দরবান সদরে। আওয়ামী লীগ ও এলডিপির মধ্যে লড়াই হচ্ছে চট্টগ্রামের চান্দনাইশে। আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হচ্ছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, চুয়াডাঙ্গা সদর, খুলনার চালনা, মাদারীপুরের কালকিনি ও সুনামগঞ্জ সদরে। এ ছাড়া রাজশাহীর পুঠিয়া, মানিকগঞ্জ সদর, ফরিদপুরের বোয়ালামারী ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
অন্যদিকে বিএনপি ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বগুড়ার নন্দীগ্রামে। আর চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
এ ছাড়া ত্রিমুখী, চতুর্মুখী ও বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে এমন পৌরসভাগুলোর মধ্যে রয়েছে নীলফামারীর জলঢাকা, কুড়িগ্রামের উলিপুর, গাইবান্ধা সদর, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, পাবনা সদর, চাটমোহর, সুজানগর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, রাজশাহীর আড়ানী, কেশরহাট, কাটাখালী, নাটোরের নলডাঙ্গা, গোপালপুর, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, মেহেরপুরের গাংনী, কুষ্টিয়ার মিরপুর, ভেড়ামারা, খোকসা, ঝিনাইদহের মহেশপুর, যশোরের নওয়াপাড়া, চৌগাছা, নড়াইলের কালিয়া, বাগেরহাট সদর, সাতক্ষীরার কলারোয়া, বরগুনার বেতাগী, শেরপুরের নকলা, নালিতাবাড়ী, ময়মনসিংহের ফুলপুর, ফুলবাড়িয়া, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর, সখিপুর, মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, সিলেটের জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখা, হবিগঞ্জ সদর, চট্টগ্রামের পটিয়া, সীতাকুণ্ড এবং রাঙামাটি সদরে।
যেসব পৌরসভায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে: আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা যেসব পৌরসভায় এগিয়ে রয়েছেন সেগুলো হচ্ছে দিনাজপুরের হাকিমপুর, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, বদরগঞ্জ, জয়পুরহাট সদর, বগুড়ার শেরপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, পাবনার সাঁথিয়া, যশোরের বাঘারপাড়া, বরগুনা সদর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, কুয়াকাটা, ভোলার বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, ভোলা সদর, বরিশালের মুলাদী, গৌরনদী, বানারীপাড়া, উজিরপুর, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, গফরগাঁও, নেত্রকোনা সদর, কেন্দুয়া, টাঙ্গাইল সদর, ধনবাড়ী, ঢাকার সাভার, নারায়ণগঞ্জের তারাব, রাজবাড়ী সদর, পাংশা, গোপালগঞ্জ সদর, মাদারীপুর সদর, শিবচর, শরীয়তপুর সদর, ডামুড্যা, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ, সুনামগঞ্জের ছাতক, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কুমিল্লার চান্দিনা, দাউদকান্দি, চৌদ্দগ্রাম, হোমনা, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, ফেনীর দাগনভূঁঞা, নোয়াখালীর বসুরহাট, চৌমুহনী, হাতিয়া, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, মীরসরাই, রাউজান, বারইয়ারহাট, রাঙ্গুনিয়া এবং বান্দরবানের লামা।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বগুড়ার ধুনট ও নেত্রকোনার মদনে এগিয়ে রয়েছেন।
যেসব পৌরসভায় বিএনপি এগিয়ে: বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা পঞ্চগড় সদর, বগুড়া সদর, গাবতলী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, বরগুনার পাথরঘাটা, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, নান্দাইল, কুমিল্লার লাকসাম, চট্টগ্রামের বাঁশখালী এবং খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভায় এগিয়ে রয়েছেন।
অন্যান্য দল এগিয়ে :রংপুরের পীরগঞ্জে জাতীয় পার্টি ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জে জামায়াতের মেয়র প্রার্থী এগিয়ে আছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও খাগড়াছড়ি সদর পৌরসভায় এগিয়ে রয়েছেন।