কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর সুরক্ষা ও বর্বর ইসরাইলের ধ্বংস কামনা করে মোনাজাতের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। আজ মঙ্গলবার ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে আসা দেশ-বিদেশের চার লাখেরও বেশি মানুষের ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া ময়দান। দেশের সর্ববৃহৎ এ জামাতে অংশগ্রহণ করতে ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহের উদ্দেশে। ঈদগাহমুখি সকল সড়ক মুসল্লিদের দখলে চলে যাওয়ায় কয়েক ঘণ্টার জন্য এসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। জামাত শুরুর প্রায় দুই ঘন্টা আগেই সাত একর আয়তনের শোলাকিয়া মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। আগত মুসল্লিদের অনেকে মাঠে জায়গা না পেয়ে পার্শ্ববতী রাস্তা, তিনপাশের ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও বাড়ীর ছাদে জায়গা করে নিয়ে জামাতে শরীক হন।
গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টির পর আজ ঈদের দিন সকাল থেকেই ছিল আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। তবে শেষ পর্যন্ত রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় মুসল্লিরা দেশের সর্ববৃহৎ এ ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করেন।
১৮২৮ সালে অনুষ্ঠিত ঈদের প্রথম বড় জামাতের হিসাব অনুযায়ী শোলাকিয়া ময়দানে এবার ছিল ১৮৭তম ঈদ জামাত। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান মাও. ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। জামাতকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সহ¯্রাধিক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও র্যাব সদস্যের কঠোর নিরাপত্তা ও নজরদারিতে শন্তিপূর্ণভাবে নামাজ শেষ হয়। মাঠের চারপাশে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো ছাড়াও মাঠের ২৮টি প্রবেশ পথে মেটালডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের দেহ তল্লশি করা হয়। নামাজ শেষে ফিলিস্তিনের গাজায় নিহতের মাগফেরাত এবং দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্য মঙ্গল কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন, কিশোরগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আ. ম মোহাম্মদ সাঈদ, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা প্রশাসক এস এম আলম, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম এ আফজল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট শরিফুল ইসলামসহ জাতীয় ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। গত ৪৪ বছর ধরে এ মাঠে নামাজ আদায় করছেন ময়মনসিংহের ভালুকার কাসর গ্রামের আখতার হোসেন ম-ল (১০৯)। এ ধরণের অসংখ্য লোকের খোঁজ পাওয়া যায় যারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে নামাজ পড়তে আসেন।
মাঠের সুনাম ও নানা জনশ্রুতির কারণে ঈদের কয়েক দিন পূর্ব থেকেই কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও সারাদেশের বিভিন্ন জেলা তথা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, যশোর, খুলনা ও চট্রগ্রামসহ অধিকাংশ জেলা থেকে শোলাকিয়ায় মুসল্লিদের সমাগম ঘটে। এদের অনেকেই ওঠেছিলেন হোটেলে, কেউবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ও শোলাকিয়া ঈদগাহ মিম্বরে। আবার অনেকেই কোথাও জায়গা না পেয়ে রাত কাটিয়েছেন শোলাকিয়া মাঠে খোলা আকাশের নিচে। ঈদের দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ২টি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করে। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়।
দেশের বৃহত্তম এ ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে মাঠ পার্শ্ববর্তী এলাকায় হস্ত, কারু ও নানারকম শিল্পের মেলা আগত মুসুল্লীদের জন্য ছিল অন্যতম আকর্ষণের বিষয়।
শত ব্যস্ততা, নানা সমস্যা আর প্রাকৃতিক বৈরিতাকে উপেক্ষা করে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ধনী-গরীব সকলে নামাজ আদায় করেন শোলাকিয়া ঈদ জামাতে। তাদের সবার উদ্দেশ্য একটাই যেন কোন অবস্থাতেই হাত ছাড়া হয়ে না যায় জামাতে অংশগ্রহণ, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ। ধনী-গরীবের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সাম্য ও সুন্দরের ভিত্তিতে এক নতুন সমাজ গড়ার এই শিক্ষা নিয়েই জামাত শেষে বাড়ির পথে শোলকিয়া ছাড়েন তারা।