গ্রাম বাংলা ডেস্ক: ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই খুশি কতটা নিরবচ্ছিন্ন, বলা কঠিন। ঈদের আগে দেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ শুভেচ্ছা-কার্ড বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে পাঠিয়েছেন। এর আগে খালেদা জিয়াও শুভেচ্ছা-কার্ড পৌঁছে দিয়েছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নয়, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। শুভেচ্ছাবিনিময়ের সময়ও তিনি জানিয়ে দিলেন যে, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি মেনে নিচ্ছেন না।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে, তাহলে তিনি কার কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি নতুন নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন? আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর তো সেই দাবি পূরণের ক্ষমতা নেই। নির্বাচন বা তত্ত্বাবধায়ক-ব্যবস্থা দুটোর ব্যাপারেই তাঁর কথা বলতে হবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। আলোচনা বা আন্দোলন করতে হবে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী মেনেই।
ঈদের আগে দুই নেত্রীর শুভেচ্ছাবিনিময়ের পাশাপাশি দুই দলের মধ্যে কয়েক দফা হুমকিও বিনিময় হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন ঈদের পর কঠোর আন্দোলন হবে বলে আগাম ঘোষণা দিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন ওমরাহ পালন করতে। সেখানে সাড়ে চার বছর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হয়, যিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানও বটে। দলের নেতারাও নাকি জানেন না রাজনীতি নিয়ে তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছে।
দেশের মানুষ কঠোর আন্দোলনের কথা শুনলেই শঙ্কিত হয়। ২০১৩ সালটি জুড়ে তারা কঠোর আন্দোলনের স্বরূপ দেখেছে। কঠোর আন্দোলন মানে হরতাল-অবরোধ। আন্দোলন মানে বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা। বোমা-ককটেল মেরে মানুষ হত্যা।
অন্যদিকে আন্দোলন দমনের নামে চলে পুলিশ-র্যাবের ঝটিকা অভিযান। ব্যাপক ধরপাকড়। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন। একটি বোমাবাজকে বমাল ধরতে না পারলেও হাজার হাজার মানুষকে আসামি করে মামলা দায়ের। গ্রেপ্তার বাণিজ্য।
বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে আওয়ামী লীগের নেতারাও পাল্টা রণহুংকার ছেড়েছেন। কেউ বলছেন, যত গর্জে তত বর্ষে না। বিএনপি পাঁচ বছরে কিছু করতে পারেনি, এখনো পারবে না। কেউ বলছেন, বিএনপিকে মাঠেই নামতে দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির সঙ্গে আলোচনার আহ্বান নাকচ করেন দিয়ে বলেছেন, মাঠেই দেখা যাবে, দেখা যাক কে কতটি গোল দিতে পারে। সম্প্রতি বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সাত গোল খাওয়ার কথাটি মনে রেখেই সম্ভবত শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিপক্ষের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের ডেকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি তুমুল যুদ্ধের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন।
দেশের মানুষ কিন্তু তুমুল যুদ্ধ দেখতে চায় না। তারা চায় ঈদের নির্মল আনন্দ। অনাবিল খুশি উদযাপন করতে। ২০১৩ সালের পুরো সময়টাই তারা তুমুল যুদ্ধ দেখেছে। আন্দোলন ও আন্দোলন দমনের নামে চলেছে সেই যুদ্ধ।
ঈদের পরে কী হবে, এখনই বলা না গেলেও ঈদের আগেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা যে একে অপরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন, তাতে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না। তাহলে কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফের একটা মহা প্রলয় আসন্ন? দুই পক্ষই রণদামামা বাজিয়ে চলেছে।
গত বছরের ঈদের আগে-পরে বিরোধী দলের কর্মসূচি থাকায় অনেকেই ভয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাননি, গিয়ে যদি ঠিক সময়ে ফিরতে না পারেন। এবারের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। রিজভী সাহেব তুমুল যুদ্ধের কথা বললেও ঈদের পরই সেটা শুরু হচ্ছে না। তিনি বলেছেন, প্রথমে আন্দোলনের কুচকাওয়াজ। আর মাঠ থাকবে জনগণের দখলে।
বাংলাদেশের রাজনীতিকেরা সবকিছুই করেন জনগণের নামে, জনগণের দোহাই দিয়ে। কিন্তু তাঁদের (সরকারি ও বিরোধী উভয় দল) কর্মকাণ্ডে যে সেই জনগণ জিম্মি হয়ে পড়ে, সে নিয়ে মাথা ঘামান না।
জনগণের নামে কেউ আন্দোলন করেন। কেউ একতরফা নির্বাচন করেন। কিন্তু যে জনগণকে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন সেই জনগণের সুখ-সুবিধার কথা তাঁরা ভাবেন না। ভাবলে ঈদের এই নির্মল আনন্দের ক্ষণে একে অপরকে হুমকি দিতে পারতেন না। তাঁরা বলতে পারতেন, যা হবে ঈদের পরে। আসুন, আমরা সবাই মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই।