ঢাকা : পৌরসভা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় কোথাও আচরণবিধি ভঙ্গ হলে ‘অ্যাকশন’ নিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিতে রিটার্নিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়েছেন, দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, আর যেন বলতে না হয়।’
নির্বাচন পরিস্থিতি বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে সাদামাটা কথা বললেও বৈঠকে সিইসি কঠোর মনোভাব দেখান বলে জানা গেছে।
শনিবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে আচরণবিধি ভঙ্গ হলে সিইসি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ‘অ্যাকশন’ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তাও বাংলামেইলকে জানান।
বৈঠক সূত্র জানায়, কাজী রকিব উদ্দীন বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা অ্যাকশন নিয়েছি। আপনাদের দেখিয়েছি, এভাবে অ্যাকশন নিতে হয়। সব কিছু নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিলেও তো হয় না। দায়িত্ব দিয়েছি, দায়িত্ব নিয়েছেন, অ্যাকশন নেয়ার দায়িত্ব আপনাদের।’
এদিকে, প্রথমবারের মতো স্বল্প সময়ে দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে গিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসি। প্রচারণার শুরু থেকেই মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় প্রার্থীদের ব্যাপক বিধিভঙ্গের কারণে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শনিবার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও খোঁড়া যুক্তিতে নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অবশ্য যে প্রার্থীর হয়ে তারা জনসমাবেশে বক্তব্য রেখেছিলেন সেই প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।
এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলার বৈঠকের অপেক্ষায় ছিল ইসি। চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, পুলিশের আইজিপি, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দাসংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি-প্রতিনিধি ও রিটার্নিং অফিসারদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন সিইসি।
আচরণবিধি ভঙ্গের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে রিটার্নিং অফিসারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা অ্যাকশন নিয়েছি, নিয়ে আপনাদের দেখিয়েছি- এভাবে অ্যাকশন নিন আপনারা। অ্যাকশন নেয়ার দায়িত্ব আপনাদের।’
‘দায়িত্ব পেয়ে কোনোভাবে অবহেলা না করা যাবে না। যে দায়িত্ব নিয়েছেন, যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটা সঠিকভাবে প্রতিপালন করতে হবে। আর যেনো আমাকে যেনো বলা না লাগে।’
সেই সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েই ইসিকে অবহিত করার জন্যও বলেন তিনি। প্রশাসন ও পুলিশদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুষ্কৃতকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না সবাই একত্রে কাজ করলে এলাকায় কোনো বেআইনী কাজ হতে পারে, সে দিন এখনো আসে নি। আমি আশা করবো, আপনার আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা করবেন। এ নির্বাচন শুধু নির্বাচন কমিশনের নয়, এ নির্বাচনটা দেশের।’
বৈঠকে নির্বাচনে ইসির অবস্থানও তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি যাতে ভঙ্গ না হয়, আমি তো ঢাকায় বসে এটা চেক করতে পারব না, ফিল্ডে আপনাদের এটা করতে হবে, আইন ভঙ্গ হলে অ্যাকশন নিতে হবে। তারপরে আপনারা আমাদের জানাবেন। এ জিনিস হয়েছে, আমি এনকোয়ারি করে এ তথ্য পেয়েছি, আইন মোতাবেক আমি অ্যাকশন নিয়েছি।’
নির্বাচনের নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, রিটার্নিং অফিসার ইনস্ট্রাকশন দিবেন, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সেভাবে কাজ করবেন। আমরা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্যে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি।এখন সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে আপনাদের। এখন নিচ্ছেন, আরো নিতে হবে ভবিষ্যতে। কেউ যেনো পার না পায়। অযথা হয়রানি যাতে কেউ না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
দুর্বৃত্তরা ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক ভোট কেন্দ্রে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন সিইসি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আপনার সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটকেন্দ্রে যেন কোনোভাবে প্রভাবিত না হয়। দুর্বৃত্তরা যেন কেন্দ্রে দখল না করে। প্রয়োজন হলে কেন্দ্রে বন্ধ করে দিতে হবে।’
ভোটকেন্দ্র কারা প্রবেশ করছেন এবং কারা বের হচ্ছেন সেদিকে খেয়াল রাখতেও নিদের্শ দিয়েছেন সিইসি।
এ দিকে বৈঠকে রিটার্নিং অফিসারদের উদ্দেশে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেছেন, আচরণ বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, কিন্তু দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সংবাদপত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, বলে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে, আবার আপনারা বলছেন- কিছু হচ্ছে না। তাহলে মাঝামাঝি পর্যায়ে কিছু একটা হচ্ছে সেগুলো তদন্ত করা হবে।
সিইসিকে আশ্বাস, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে পুলিশের মহাপরির্দশক একেএম শহিদুল হক বলেন, ‘২৩৪টি পৌরসভায় ২১ হাজারের মতো পুলিশ সদস্য লাগবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৫ থেকে ৬ রাখতে গেলে একটু সমস্যা হবে। তাই সাধারণ কেন্দ্রে তিনজন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে চার পুলিশ সদস্য রাখার পক্ষে মত দেন আইজিপি। তবে আইজিপির এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, প্রয়োজনে টহল সদস্য কমিয়ে দিয়ে কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ সদস্য রাখবেন।
বৈঠকে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য হেলিকেপ্টারও ব্যবহারের প্রস্তুতি থাকবে বলে জানান। ভোট ব্যবস্থাপনার অসুবিধা রোধে সাংবাদিকদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ বিশেষ করে নীতিমালা করে দেয়ার জন্য কর্মকর্তাদের অনেকেই সুপারিশ করেন। তবে তাতে সারা দেননি সিইসি।
বিদ্যমান নীতিমালা মেনে সাংবাদিকরা কাজ করবে এবং তাদের কাজের বিষয়ে সজাগ থাকবে আশার করেন তিনি।
বৈঠকে ইসি সচিব, নির্বাচন কমিশনাররা, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিজিবি, আনসার ভিডিপি, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি ও রিটার্নিং অফিসাররা (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সার্বিক, ইএনও, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) উপস্থিত ছিলেন।