সিনেমা রিলিজ মানেই যে টেনশন রিলিজ না হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি ! মানুষের প্রশংসাও যে কখনো টেনশন, দায়িত্ব, স্বপ্ন বাড়িয়ে দিয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতির তৈরি করে তা এবার বুঝলাম ! সেই অদ্ভুত অনুভূতির মধ্য দিয়ে সময় পার করছি! আর তাতে করে শুটিংয়ের সময় যতটা না ‘অতশী’ আমি ছিলাম, এখন যেন তার চাইতে বেশী ‘অতশী’!
১১ডিসেম্বর, ‘অনিল বাগচীর একদিন’ রিলিজ হল, সকালটাই শুরু রোমাঞ্চকর অনুভূতি দিয়ে। ঘোড়ার গাড়ী! এর আগে কখনো এভাবে চড়িনি! প্রায় পাঁচ ঘন্টা ‘অনিল বাগচীর একদিন’র পোস্টারে ছাওয়া ঘোড়ার গাড়িতে চষে বেড়ালাম ঢাকার রাজপথ। সাথে হিমু পরিবহনের একদল ইয়াং টগবগে হিমু। চারদিকে উৎসুক মানুষের চোখে অবাক ভালোবাসা! নিজেকে রাজা রাজা মনে হচ্ছিল! তারপর সিনেমা হলে। আর তারপর?
দর্শকদের সাথে কথা বলার জন্য এক্সিট গেইটে দাঁড়ালাম আমি আর আরেফ। কথা হলো- না, মুক্তিযুদ্ধের ছবি দর্শকের কাছে বোরিং লাগেনি। আরেফ আর আমার প্রতি তাদের তাকানো দেখে মনে হচ্ছিলো আমরা যেন ৭১’র যুদ্ধই জয় করে আসলাম। কেউ কেউ মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করছিল। ভালো ছবি, সুন্দর গল্প, দুর্দান্ত অভিনয় এসবই শুনছিলাম আমরা। অনেকেই বলছিলো পরিবারের বাকিদের নিয়ে ছবিটা আবার দেখবে। কেউ বাচ্চাদের নিয়ে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দেখাবে বলে। রবীন্দ্রসঙ্গীতে আমি নিজে কণ্ঠ দিয়েছি জেনে কেউ আমার গানের প্রশংসা করছিল। আর জীবনে এই প্রথমবারই আমার গান গাওয়া, প্রথমবারই সিনেমায় প্লে ব্যাক! প্রচণ্ড টেনশনে ছিলাম। দর্শকের ভাল লেগেছে জেনে লজ্জা থেকে বাঁচলাম। আমার পুচকি ইয়াং দর্শকরা যাদের কাচ্ছে আমি ‘আপ্পি’, সেলফি তুলতে তুলতে তারা বলছে ‘আপ্পি, জোশ একটা মুভি। ফ্রেন্ডসদের নিয়ে আবার দেখব’।
এমন আরও আরও মতামত ! এক আপু ছলছল চোখে জড়িয়ে ধরে বলছিলেন ডিসেম্বর বুকের মধ্যে নিয়ে হল থেকে বের হচ্ছি। এমন কথাবার্তা শুনলে, এমন সিচুয়েশন হলে চোখে পানি চলে আসেনা, বলেন? এত মানুষ-ক্যামেরা-মেকআপ-অবস্থান-এইসব সামলাতে আবার শক্ত থাকার ভান করে লুকিয়ে সে পানি মুছতেও হয় !
উপন্যাসটি অনেকের পড়া বলে ‘অতশী’ চরিত্র নিয়ে ছিল বাড়তি টেনশন। ‘অনিল’ কেন্দ্রিক এই সিনেমায় অতশীও যে এত পজেটিভলি মানুষের চোখে পড়বে, মানুষ একসেপ্ট করবে আমি ভাবিনি ! এ তো আরেক জ্বালা! ঘুম আর রেস্ট হারাম জীবন থেকে! ছবি কোথায় চলবে, দর্শক কি বলবে এসবই শুধু মাথায়!
মাত্রতো দু’দিন হলো। যারা এখনো দেখেননি আশা করছি সামনের শো-গুলোতে ‘অনিল বাগচীর একদিন’ দেখবেন। শুধু ভালোটা না, আমাদের খারাপটাও আমরা শুনতে চাই। দর্শকের এবং আমাদেরও অভিযোগ আছে ছবির প্রচারের ঘাটতি নিয়ে। জানিনা ছবির পরিবেশকরা কতটা এসবের দিকে নজর দিচ্ছে। অনেক আনন্দ হচ্ছে যখন একজন দর্শক বা আমাদের বন্ধুরাই তাদের ভালো লেগেছে বলে অন্যদেরও বলছে ছবিটি দেখতে। সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
আশা করি আপনারা ‘অনিল বাগচীর একদিন’র সাথে থাকছেন, আমাদের বাংলা সিনেমার সাথে থাকছেন।