মাঠেই খেলা হবে বিএনপির সাথে

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ রাজনীতি সারাবিশ্ব

6671f9de9e445222e9f168a41354d173-pm
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: যুক্তরাজ্য সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেনি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছেন, যা হওয়ার হয়েছে, এখন সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
গতকাল গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তৎকালীন বিরোধী জোট বিহীন ওই একতরফা নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকার অস্বস্তিতে আছেÑ বিভিন্ন মিডিয়ায় এমন সংবাদ প্রকাশ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আরো বলেন, ‘তিনি (ডেভিড ক্যামেরন) তো আমাদের সরকারকে নাকচ করেননি। বলেননি আমি প্রধানমন্ত্রী নই। তবে ইলেকশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ফরোয়ার্ড লুকিং। তিনি পেছনে না তাকিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।’
‘ঘরের বদনাম বড় করে ফলাও করে কী লাভ?’ পাল্টা প্রশ্ন করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সরকার নিয়ে যদি দ্বিধা থাকত তাহলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী (ডেভিড ক্যামেরন) বারবার ফোন করে আমাকে দাওয়াত দিতেন না। ডেভিড ক্যামেরন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে নিজেই আমাকে ‘রিসিভ’ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য সফরের বাইরেও প্রধানমন্ত্রীকে বিএনপির সাথে সংলাপের সম্ভাবনা, ঈদের পর বিএনপির আন্দোলন, জামায়াতের সাথে আঁতাতের অভিযোগ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনের নির্বাচনও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাংবিধানিকভাবে হবে।
বিএনপির সাথে সংলাপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক দলকে যথাসময়ে যথাযথ ভূমিকা নিতে হয়। সেটি তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের ভুলের খেসারত কেন আমাকে দিতে হবে? এখন ডায়ালগ ডায়ালগ করছেন। আমি যদি রাষ্ট্র চালাতে ব্যর্থ হতাম তাহলে কথা ছিল। যেভাবে হোক নির্বাচন হয়েছে। জনগণ মেনে নিয়েছেন। ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনের পর দেশের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এটা দেশের মানুষ উপলব্ধি করছেন। কিন্তু দেশের মানুষের এ স্বস্তি দেখে কয়েকজন খুশি হননি। তারা চেয়েছিলেন গণতন্ত্রকে ব্যাহত করতে। থাইল্যান্ডের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে এবং তাদের গাড়িতে পতাকা তুলতে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে এ দেশ থাইল্যান্ডে পরিণত হতো।
ঈদের পর বিএনপি আন্দোলনের ঘোষণা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘মাঠে নামুক না। মাঠে আওয়ামী লীগ আছে, মানুষ আছে। মাঠের খেলা মাঠেই হবে। ফুটবল মাঠে কে কয়টা গোল দেয়, সেটা সেখানেই দেখা যাবে। আর নির্বাচনের ট্রেনতো চলে গেছে। এখন তাদের নতুন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরেকটা ট্রেন কখন আসে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কাদের সাথে সংলাপ করব? যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তাদের সাথে কিভাবে সংলাপ হবে? তারপরও বিএনপি নেত্রীকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে অপমানিত হয়েছিলাম। আমাকে আর কতবার অপমানিত হতে বলেন?
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কোন দুঃখে আঁতাতের রাজনীতি করতে যাব? জামায়াতের সাথে আঁতাত করে আমার লাভ কী? খালেদা জিয়া জামায়াতের নেতাদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। তাদের হাতে আমার লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। তাদের গ্রেফতার করে জেলে পুড়েছি, সে সাহসটা কে দেখিয়েছে? পারলে আমিই পারব। আর যারা বিএনপিকে মতায় আনার চেষ্টা করে, কেঁদেকেটে অস্থির হয়, তাদের আঁতাত কার সাথে হয়েছে, খোঁজ নেন। এমন ডুয়েল রোল কেন?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ধীরগতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি তো ধরে ফাঁসি দিতে পারি না। দায়িত্ব বিচার বিভাগের। জুডিশিয়ারি রায় দিলে রায় কার্যকর করব।’
বিএনপির আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী বাধা দেবে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি কি চান আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী বাস পোড়াতে, মানুষ মারতে সহায়তা করবে? আমি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে জনগণের সাথে থাকব। মানুষকে রা করতে হবে। তারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা করবে আর আমরা বসে বসে দেখব? যারা এসব করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
বিএনপির কয়েকজন নেতা ১৫ আগস্টের মতো কোনো ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকে নিতে হবে বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে। সূরা আল ইমরানের ২৬ নম্বর আয়াতে আছে সম্মান দেয়ার মালিক আল্লাহ। জন্মালে মরতে হবে। মরার আগে মরে যাব না। দুর্বলের তর্জন-গর্জন বেশি।
দুই দেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ব্রিটেন সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। ব্রিটেন বাংলাদেশের পরীতি বন্ধু। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী মূলোৎপাটনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
২১ থেকে ২৩ জুলাই অংশ নেয়া গার্ল সামিট সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ৫৫টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এ সম্মেলনে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে সব বাল্যবিবাহ বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। সম্মেলনে আমি আমার মতামত প্রকাশ করি। ২০১৫ সালের পরবর্তী উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হয় যেখানে বাংলাদেশ স্বার করেছে। এ সময় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন তিনি।
বিচারপতি অপসারণের মতা সংসদের হাতে থাকা উচিত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সামরিক শাসকেরা করেছিল। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার সাথে এটি খাপ খায় না। জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমান দিয়ে মতায় বসে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন। ইতোমধ্যে জিয়ার শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরে আমরা একটি সর্বদলীয় বিশেষ কমিটি করে সংবিধান সংশোধন করি। তখনো বিষয়টি উঠে এসেছিল। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে আইন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ অনেকের মতামত নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু দেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ধারা চলছে। সে জন্য ’৭২-এর সংবিধানের ধারা ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণের প্রতিনিধিদের হাতেই মতা থাকা উচিত’ মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য সরকার ও ইউনিসেফের আমন্ত্রণে ২১ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন। প্রথমবারের মতো আয়োজিত গার্ল সামিটে ২০২১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ বন্ধের অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *