পদ্মা সেতুর মূল কাজ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

Slider জাতীয়
2015_10_28_08_56_13_QgZqnbQwOPm3Ak2jBuj6fmkqWG6O4o_original
যুগ যুগ ধরে স্বপ্ন দেখা পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের মূল কাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে নবনির্মিত হেলিপ্যাডে পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার।
এর মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে বহুযুগের আশা। বেলা পৌনে ১০টার দিকে হেলিকপ্টারে করে তার জাজিয়ায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও কুয়াশার কারণে তা বিলম্বিত হয়।
দুপুর ১২টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় সেতুর সার্ভিস পাইল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর দোগাছিতে সেতুর সার্ভিস এরিয়ায় প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন। সেখানে বিশ্রামের পর দুপুর আড়াইটায় মাওয়া চৌরাস্তায় মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করবেন।
ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ২৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর কাজ হয়েছে ১৭ শতাংশ। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, ভূমি অধিগ্রহণ, সংযোগ সড়কের মতো কাজ শেষের পথে থাকলেও সেতু নির্মাণের মূল কাজ পাইলিং ও নদীশাসন আজই শুরু হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে উৎসবের আমেজ পদ্মার দুই তীরে। তাকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নদীর দুই তীরের সড়কগুলো। স্থানীয়দের আশা, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকায় থাকায় নির্দিষ্ট সময়েই শেষ হবে পদ্মা সেতুর কাজ। সেতুকে ঘিরে নদীর দু’পাড়ে আধুনিক শহর গড়ে উঠবে। গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, পদ্মার দুই পাড়ে হংকং-সাংহাইয়ের মতো শহর গড়ে তোলা হবে। নির্মাণ করা হবে আধুনিক বিমানবন্দর।
দেশীয় অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু। অর্থ ব্যয়ের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্রকল্প। ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। এতে ব্যয় হবে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ভারত অনুদান হিসেবে ২০ কোটি ডলার দিয়েছে। বাকি প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। কাজ করছেন দেশি-বিদেশি চার হাজার কর্মী।
প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হবে। দ্বিতল এই সেতুর নিচতলা দিয়ে চলবে ট্রেন। ওপর তলায় চার লেনের সড়কে চলবে গাড়ি। রাজধানীর সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে যুক্ত হবে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা। ওই অঞ্চলের সঙ্গে রেলপথে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সেতু বাস্তবায়িত হলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বাড়বে এক দশমিক দুই শতাংশ।
যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর ১৯৯৮ সালের ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের প্রস্তাব দিতে বলেন। ২০০১ সালের ৪ জুলাই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়; কিন্তু নানা জটিলতা ও অর্থসংস্থান না হওয়ায় কাজ শুরু হতে ১৩ বছর লেগে যায়।
সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশের সঙ্গে। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১২ সালের ২৯ জুন তা বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। এতে সেতুর ভবিষ্যৎ ঘোর অনিশ্চতায় পড়ে। সব সংশয় কাটে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। এদিন প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা দেন, নিজস্ব অর্থায়নেই হবে পদ্মা সেতু। এই বিশাল ব্যয় বাংলাদেশের পক্ষে জোগান দেওয়া সম্ভব কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, নিজের টাকাতেই হবে পদ্মা সেতু।
গত তিন অর্থবছরের বাজেটে সেতুর জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়। চলতি অর্থবছরেও বরাদ্দ রাখা হয়েছে আট হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।
মূল সেতুতে ব্যয় হচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর ঠিকাদার চীনা প্রতিষ্ঠান মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। নদীশাসনে ব্যয় হবে আট হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আরেক চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করছে এ কাজ। দেশীয় প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম দুই প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ সার্ভিস এরিয়া নির্মাণের কাজ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট নির্মাণকাজ তদারক করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *