মেয়েদের হাতে মরলেই দোজখ, আইসিসের ভয়!

নারী ও শিশু

2015_12_11_10_07_24_qXsk1z1Vw5VN2z3yoMrOX3dRbbqt7c_original

 

 

 

 

ঢাকা: কুরু-পাণ্ডবদের পিতামহ ভীষ্ম মেয়েদের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তাকে পরাস্ত করতে শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শে শিখণ্ডিকে খাড়া করেছিলেন পাণ্ডুপুত্ররা। তাকে দেখেই ভীষ্ম অস্ত্র ত্যাগ করে শরশয্যা পেতে স্বেচ্ছামরণে যান। তবে এর সঙ্গে স্বর্গ-নরকে যাওয়ার সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু এই সময়ের আইসিস জঙ্গিদের বদ্ধমূল ধারণা, মেয়েদের হাতে মরলে বেহেশতে ঠাঁই হবে না। সরাসারি দোজখ। সে কারণে, মেয়ে দেখলেই ভীতসন্তস্ত্র আইসিস বাহিনী। মৃত্যুভয় নয়, ভয় মহিলাদের হাতে মরায়!

ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনে যারা যোগ দেয়, তাদের মগজধোলাই করা হয় এভাবে যে, যদি তুমি ইসলাম রক্ষার জন্য লড়াই করে মরো, তবে নিশ্চিত বেহেশত পাবে। আর এই বেহেশতের লোভে হুরহুর করে সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লেখায় মগজধোলাইয়ের শিকাররা। আর সেই মগজধোলাইয়ের আরেকটি কৌশল, ‘মরলে পুরুষের হাতে মরো। মেয়েছেলের হাতে মরা? নৈব চ নৈব চ’!

 

তবে এবার রীতিমতো ভিমড়ি খাবার যোগাড় আইসিসের। বিশ্বাসের সেই পথে এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কুর্দিসেনার নারীবাহিনী, যারা অস্ত্র হাতে সমানে টেক্কা দিচ্ছে আইসিসের সঙ্গে।

জঙ্গিদলে যারা ভেড়ে, তারা এটা জেনেই যায়, মরতে হবে। মরতে তারা ভয় পায় না। কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করে যে মরতে হতে পারে, এমন ভাবনা তাদের মাথাতে আসেনি আগে। তাই কুর্দি মহিলা সেনাদের দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত আইসিস।

আইসিসের সঙ্গে ময়দানে লড়ে এই সত্যটা জেনে ফেলেছেন মহিলা সেনারাও, বলছিলেন কুর্দি মহিলাদের এক মিলিশিয়া কমান্ডার। এই মুহূর্তে ইরাক ও সিরিয়ায় আইসিসের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে ওয়াইপিজের উইমেন’স প্রোটেকশন ইউনিট এবং ওয়াইপিজি’র পিপল’স প্রোটেকশন ইউনিটস। এই দুটো ইউনিটই সাজানো মহিলা যোদ্ধায়।

সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাত্‍‌কারে বেন ওয়েডেমান নামে ২১ বছর বয়সী ওই কমান্ডার বলেন, ‘আইসিস বিদ্রোহীরা মনে করে, ওরা ইসলামের নামে যুদ্ধ করছে। সেই যুদ্ধে কাউকে কুর্দি মহিলা যোদ্ধার হাতে মরতে হবে, এটা ভাবলেই ওরা ভয় পেয়ে যায়। যে কারণে, মহিলা দেখে ওরা ভীত হয়ে পড়ে।’

 

এই মুহূর্তে ওয়াইপিজেতে আছে ৫০ হাজার যোদ্ধা, এর ২০ শতাংশ মহিলা সদস্য। এই মহিলাদের মিলিশিয়া ইউনিটটি আবার সাজানো শুধু কুর্দিশ মহিলায়। ইরাক ও সিরিয়ায় আইসিসের সঙ্গে লড়াইয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে এই মহিলা মিলিশিয়ার।

আরেক মেয়েযোদ্ধা তেহেলদিন আইসিস প্রসঙ্গে বলেন, ‘আইসিস মনে করে তারা ইসলাম রক্ষায় যুদ্ধ করছে।’

২০ বছর বয়সী আরেক মেয়েযোদ্ধা এফেলিন, তাকে জিজ্ঞেস করা হয় আবার যদি আইসিস আল হাউলে হামলা চালায় কী করবে? হো হো করে হেস উঠে এফেলিন বলে, ‘যদি তারা আসে তাহলে একজনকেও জীবিত রাখা হবে না’।

 

উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আল হাসাকেহর দক্ষিণে গাড়িতে চড়ে এক ঘণ্টা এগোলেই আল হাউলের অবস্থান, যেখানে এফেলিন, তেহেলদিন ও তাদের বোনেরা অস্ত্র হাতে ঘাঁটি গেড়েছেন। তারা প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছেন ভয়ঙ্কর আইসিসের বিরুদ্ধে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *