ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন, সাম্প্রতিক ঘটনার দায় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমানকে সরাসরি না দিলেও সরকারদলীয় এই সাংসদ নিজেই বিষয়টি টেনে নিয়েছেন।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদমাধ্যকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আইভী দাবি করেন, অপহরণ ও খুনের ঘটনায় তিনি নামোল্লেখ করে অভিযোগ আনেননি।
তিনি বলেন, “আমি যে কথাটা বলেছিলাম আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমি হাসপাতালে ঢুকতে ঢুকতে সাংবাদিকদের বলেছি যে, এই শহরের গডফাদারদের আর কতো লাশের প্রয়োজন? আমি তো বলেছি গডফাদারদের লাশের প্রয়োজন, তাহলে শামীম ওসমান নিজেকে গডফাদার মনে করলেন কেন?”
আইভী বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, “আপনারা খেয়াল করে দেখবেন আমি কিন্তু কোথাও বলি নাই যে শামীম ওসমান জড়িত। আমি কখনোই কারো নাম বলি নাই।
“নুর হোসেনও তো একটা গডফাদার। শামীম ওসমান কেন এটা তার দিকে নিলো? আমি কিন্তু কারো নাম বলি নাই।”
শামীম ওসমানের নাম আসা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন “তবে এটা বলেছি যে, অনেক কিছুর জন্যই এ পরিবার দায়ী। আমি যদি একটা একটা করে কারণ দেখাই, কেন দায়ী। আমি তো ইলেকশনের সময় দেখেছি। একটা একটা করে নাম যদি বলি?”
মেয়র নির্বাচনে আইভী শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে হারিয়েছিলেন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে শামীম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। আওয়ামী লীগের এই নেতার বিবাদ নিয়মিতই গণমাধ্যমের শিরোনাম তৈরি করে।
শামীম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তার পক্ষের লোক মারা যাচ্ছে বলে তার অভিযোগ। তাহলে যে সব লোক মারা গেছে, তাদের একটা লিস্ট নেন তার কাছ থেকে। কতোজন মারা গেছে সেই লিস্ট নিয়ে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড বের করেন, তাহলে আর কোনো অসুবিধা হবে না। ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেন যে তারা কারা ছিলো, তারা কেন মারা গেল।”
শামীম ওসমানের পরিবারের সমালোচনা করে আইভী বলেন “আমি তো কোনো অন্যায় কথা বলি নাই। এবং নারায়ণগঞ্জে এমন আরেকটা পরিবার দেখান, যারা এরকম দুঃসাহসিক কাজ করতে পারে। আমি যা কথা বলি, তা ভুল কোনোকিছু বলি নাই, এবং আমি আমার কথাতেই থাকব।
“এটা যদি আপনারা বলেন পারস্পরিক রোষ, তাহলে ঠিক হবে না। কেউ কেউ বলছে পারিবারিক কোন্দল, এটাও সঠিক হচ্ছে না। আমি তো উনার সঙ্গে পারিবারিক কোন্দল করছি না। উনার সঙ্গে আমার পদ-পদবী নিয়ে ঝগড়া নাই, জমি-জমা নিয়ে ঝগড়া নাই, টাকা-পয়সা নিয়ে ঝগড়া নাই। তাহলে তার সঙ্গে আমার ঝগড়াটা কীসের? ঝগড়াটা নীতি এবং আদর্শের। ন্যায় এবং অন্যায়ের।”
সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি আরো বলেন, “আমি ইলেকশানের সময় বার বার বলেছি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভোট দেন, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ভোট দেন। আমি শান্তির নারায়ণগঞ্জ নগরী বানাবো। সেখানে অশান্তির নগরী হলে আমার কী ফরজ হয় না কথা বলা দুই একটা? “আবার কথা বলতে গেলেও হিসাব করে বলতে হয় যে, কোন কথাটা বললে আবার আমার সরকার বেকায়দায় পড়বে। আমি কিন্তু তিনদিন কথা বলছি, চার দিনের দিন আমি মিডিয়াতে কথা বলা থামিয়ে দিয়েছি। এবং তখন সে (শামীম ওসমান) এককভাবে সবগুলো টক শোতে কথা বলে গেছে। আমার বাবাকে নিয়ে বলল, আমাকে নিয়ে বলল. আমার পুরো বংশকে (চৌদ্দ গুষ্টিকে) নিয়ে বলল।”
তিনি বলেন, “আমি এসব কথারই জবাব দিতে পারতাম। কিন্তু আমি একটা কথারও জবাব দেই নাই। উনি চেয়েছেন আমি উত্তেজিত হই। আমি কিন্তু উত্তেজিত হই নাই।
“উত্তেজিত হয়ে আমি কার বিরুদ্ধে কথা বলব? শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে তো আমার কথা বলার দরকার নাই। মানুষই এখন অনেক কথা বলে, যেটা আগে বলতো না। তো আমার বলার দরকারটা কী?”
দলের প্রতি আনুগত্যের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আইভী বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা আমি আমার লোকজন নিয়ে দলের কোনো ক্ষতি করছি কি না। এখন আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমি রাজনীতি ছেড়ে যাবো কি না। শামীম ওসমান চাচ্ছে যে এই মেয়ে বিরক্ত হয়ে রাজনীতি ছেড়ে চলে যাই, যেমন এর আগে আরো কয়েকজন চলে গেছে।”
নারায়ণগঞ্জের বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এখনকার অবস্থা কিছুই বলতে পারবো না। আমার চেয়ে আপনারা ভালো জানেন। এখন একটাই কথা যে, এইটার সঙ্গে যেই জড়িত তা বের করা দরকার সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য।”
সম্প্রতি ওসমান পরিবারের সদস্য ও জাতীয় পার্টির সাংসদ নাসিম ওসমান ভারতে হাসপাতালে মারা যান। এর ফলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি খালি হয়।
আইভি বলেন, “সামনের উপনির্বাচনেও আমাদের (আওয়ামী লীগকে) বের হয়ে আসতে হবে। সেখানে যদি আমরা বের হয়ে না আসি তাহলে সেখানেও তো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে সরকার যে, সরকারের জনপ্রিয়তা কমে গেছে।”(বিডিনিউজ)