নির্বাচনী বিধিতে মারাত্মক ত্রুটি, জটিলতার আশঙ্কা

Slider জাতীয়

 

2015_12_08_22_43_51_Yj3Sy8cywpjgSj7kJIiPXrrAqOSSAV_original

 

 

 

 

ঢাকা : পৌরসভা নির্বাচন বিধিতে মারাত্মক ভুল রেখেই পৌর নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৩৫ পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও তা কারো চোখে পড়েনি। অবশেষে বিধিতে অন্তত ছয়টি ক্ষেত্রে ভুল শনাক্ত করতে পেরেছে কমিশন সচিবালয়।

নির্বাচনের মাঝামাঝিতে এসে এমন গুরুতর ভুল শনাক্ত হওয়ায় পৌরসভা নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে আইনি জটিলতা তৈরির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার এ পর্যায়ে এসে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন সচিবালয়।

এ সংক্রান্ত একটি নথি উপস্থাপনও করা হয়েছে বলে ইসি সূত্রে জানা যায়।

এর আগে সংসদ সদস্যদের প্রচারণার সুযোগ দেয়ার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ নভেম্বর বিধি সংশোধনের বিষয়ে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন,  (আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি)সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় যেতে দিতে বিধি সংশোধনের দাবি এসেছে। আমরা আলোচনা করে দেখেছি-তফসিল ঘোষণার পরএ পর্যায়ে কোনো সংশোধনী আনা সমীচীন হবে না।

বিধি সংশোধনের জন্য প্রস্তুতকৃত নথিতে দেখা গেছে, সিইসির ওই বক্তব্যের পর বিধির ত্রুটিগুলো শোধরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিধির ছয়টি ক্ষেত্রে সংশোধনের জন্য নথি উপস্থাপন করা হয়েছে।

এগুলো হলো : প্রতীক বরাদ্দ সংক্রান্ত ৪টি উপধারা সংশোধন, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সংক্রান্ত একটি উপধারা সংশোধন এবং নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত ছয় ধরনের ফরমে সংশোধনী।

নথিতে দেখা গেছে, প্রতীক বরাদ্দ সংক্রান্ত ৪টি উপধারা নিয়ে ত্রুটি রয়েছে। বিদ্যমান বিধির ১৯(১)(ক) উপধারায় মেয়র পদে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য দলীয় প্রতীক বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এজন্য তফসিল-২ থেকে প্রতীক বরাদ্দের জন্য বলা হয়েছে ওই উপধারায়। অপরদিকে তফসিল-২ এ ১৯(১)(ক) উপধারাটি উল্লেখ করা হয়নি। এর ফলে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ ক্ষেত্রে জটিলতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘তফসিল-২ এর ‘বিধি ১৯(১) দ্রষ্টব্য’ শব্দগুলি, সংখ্যাগুলি ও বন্ধনী এর পরিবর্তে ‘বিধি (১৯)(১)(ক) দ্রষ্টব্য’ শব্দগুলি, সংখ্যাগুলি, অক্ষর ও বন্ধনী প্রতিস্থাপিত হবে।

একইভাবে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের জন্য প্রতীক তালিকা তফসিল-৩ এর ক্ষেত্রে বিধির ১৯(২)(খ) ধারা দ্রষ্টব্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ১৯(২)(খ) ধারায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই। এটি ১৯(১)(খ) ধারায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক দেয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশোধনীতে বলা হয়েছে- ‘তফসিল-৩ এর পর বিধি ১৯(২)(ক) দ্রষ্টব্য’ শব্দগুলি, সংখ্যাগুলি ও বন্ধনী এর পরিবর্তে ‘বিধি (১৯)(১)(খ) দ্রষ্টব্য’ শব্দগুলি, সংখ্যাগুলি, অক্ষর ও বন্ধনী প্রতিস্থাপিত হবে। তফসিল-৪ একইভাবে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার বিধানেও ত্রুটি রয়েছে।

এছাড়া বিধি ১২ ধারায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী বা চেয়ারম্যান পদে ইতিপূর্বে পৌরসভায় নির্বাচিত হলে তাদের জন্য ১০০ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দিতে হবে না। এ ধারায় আগে শুধু মেয়রদের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ার পর এ বিষয়ে সংশোধনী আনতে যাচ্ছে কমিশন।

প্রস্তাবে মনোনয়নপত্র, নির্বাচনে এজেন্ট নিয়োগসহ নির্বাচনের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজে ব্যবহৃত ফরম ক, গ, জ, জ-১, ঢ ও ন নম্বর ফরমের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে কমিশন।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘একটু সমস্যা আছে। তবে এ বিষয়ে এই মুহুর্তে কিছু বলতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’

ইসির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পৌরসভা নির্বাচন আইনের সংশোধনী নিয়ে প্রথমে অধ্যাদেশ ও পরে তা বাতিল করে জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়। ওই কারনে বিধিমালায় দুই বার সংশোধনী আনতে হয়েছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে বিধিমালায় দুই ধরনের সংশোধনী আনতে গিয়ে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে। ওই সব ত্রুটি এই মুহূর্তে সংশোধন করা না হলে প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় বিধিতে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব পযায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এগুলো ক্লারিক্যাল মিসটেক। এর জন্য নির্বাচন আটকাবে না তবে  তড়িঘড়ি করার জন্য কমিশনকে মাশুল দিতে হচ্ছে। আইন সংশোধনে সরকারের বিলম্ব করার কারণে কমিশনকে এ ঝামেলা নিতে হচ্ছে।

ইসি কর্মকর্তারা বলেন, দলীয়ভাবে পৌরসভা নির্বাচনের আইন ও বিধি সংশোধনের আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার ও নির্বাচন কমিশন সংলাপ করতে পারত। তাহলে এ পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।

আগামী ১৪ ডিসেম্বরের আগে এসব সংশোধনী আনা না হলে প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে পারেন রিটার্নিং অফিসাররা। ইতোমধ্যে কয়েকজন রিটার্নিং ও সহকারী কর্মকর্তা বিষয়টি কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে মৌখিকভাবে ব্যাখা চেয়েছেন বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *