ঢাকা: বাঙালি নারী জাগরণের পথিকৃত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত সাহিত্যিক, সাংগঠনিক ও লেখক। বাংলার নারী সমাজের সংস্কারে তিনি রেখেছেন অসামান্য ভূমিকা।
০৯ ডিসেম্বর (বুধবার) বেগম রোকেয়া দিবস। ১৮৮০ সালের এ দিনে তিনি জন্ম নেন। আবার ১৯৩২ সালের একই দিনে তিনি প্রয়াত হন।
তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থায় নারীরা ছিলেন গৃহবন্দি। ফলে স্কুলে গিয়ে বেগম রোকেয়ার পড়ালেখা শেখা হয়নি। ঘরে বসেই তখন নারীরা আরবি ও উর্দু চর্চা করতেন। কিন্তু বড়ভাইয়ের সহযোগিতায় বেগম রোকেয়া বাংলা ও ইংরেজি শেখেন।
রোকেয়া সাহিত্য ভুবনে পা রাখেন বিয়ের পর। তার স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন পেশায় ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। তিনিই বেগম রোকেয়াকে সাহিত্য চর্চায় প্রেরণা দেন।
১৯০২ সালে রোকেয়া ‘পিপাসা’ গল্পের মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি নারীশিক্ষাকে এগিয়ে নিতেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন।
১৯০৯ সালে তিনি ভাগলপুরে প্রথম রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণবশত স্কুলটি বেশিদিন টেকেনি। পরবর্তীতে একবছর পর ১৯১১ সালে কলকাতায় পুনরায় একই নামে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন।
রোকেয়া সাখাওয়াতের জীবনের শুরুটা পর্দার আড়ালে কাটলেও তিনি ছিলেন নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এই বিশ্বাসকে এগিয়ে নিতে তিনি বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যোগ দেন ও নারীদের এসব কাজে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান। এর ফলশ্রুতিতে ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠা পায় মুসলিম নারী বিষয়ক সংগঠন আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম।
বেগম রোকেয়ার বিশেষ কিছু গ্রন্থ সর্বাধিক পরিচিত। পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর ইত্যাদি। তার উল্লেখযোগ্য রচনা, সুলতানার স্বপ্ন। মৃত্যুর আগে বেগম রোকেয়া একটি অসমাপ্ত প্রবন্ধ রেখে যান। এর নাম ‘নারীর অধিকার’।
বেগম রোকেয়া তার লেখনিতে নারীবৈষম্য প্রতিরোধে সোচ্চার হয়েছেন। সামাজিক সচেতনতা ও নারী-পুরুষ সমানাধিকার বিষয়ে হয়েছেন স্পষ্টবাদী।
বর্তমান আধুনিক নারী সমাজ সৃষ্টিতে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের অবদান অসামান্য।
১৯৩২ সালের ০৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জন্ম ও মৃত্যুদিনে নারীজাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্য রইলো গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।