আইপিওতে প্রিমিয়াম চাইলেই বুক বিল্ডিং

অর্থ ও বাণিজ্য

untitled-22_178466

প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়ায় মূলধন উত্তোলনে আগ্রহী কোম্পানি শেয়ারের প্রকৃত (অভিহিত) মূল্যের তুলনায় বেশি মূল্য (প্রিমিয়াম) চাইলে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিও আবেদন করতে হবে। একই সঙ্গে এ পদ্ধতিতে নির্ধারিত শেয়ারদরের (কাট-অব-প্রাইস) ওপর ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে হবে। এমন বিধান রেখে ‘পাবলিক ইস্যু বিধিমালা ২০০৬’-এর সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

গতকাল সোমবার কমিশনের সভায় এ খসড়া অনুমোদন করা হয়। সংস্থার মুখপাত্র সাইফুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, একই সভায় মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার সংশোধনের খসড়াও অনুমোদন করা হয়েছে। এতে ফান্ড ব্যবস্থাপনায় সাফল্য-ব্যর্থতা নিরূপণের ভিত্তিতে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ফি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা কোম্পানির এ সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা নিরূপণ হবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদানের ভিত্তিতে। উভয় বিধিমালা সংশোধনের খসড়া শিগগির জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রকাশ করা হবে। এরপর তা চূড়ান্ত করবে কমিশন।
কমিশন মুখপাত্র জানান, অনুমোদিত খসড়া অনুযায়ী যেসব কোম্পানি অভিহিত মূল্যে আইপিও আবেদন করবে, সেগুলোকে ফিক্সড প্রাইস (নির্দিষ্ট মূল্য) পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদনের যোগ্য হলে কমিশন তা অনুমোদন করবে।
তবে অভিহিত মূল্যের তুলনায় বেশি দর চাইলে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিও অনুমোদনের আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের দর নির্ধারণ করা হবে দুই দফায় কমিশন অনুমোদিত যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দর প্রস্তাবের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো দায় থাকে না। বিগত সময়ে প্রিমিয়ামে আইপিও অনুমোদন পাওয়া কোম্পানির শেয়ারের দর নির্ধারণ নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে কমিশন এ নিয়মের সংশোধনের এ প্রস্তাব দিয়েছে। প্রায় দেড় বছর আগে কমিশন এ সংশোধনের পরিকল্পনা করেছিল। সমকালে এ বিষয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল।
গতকালের কমিশন সভায় অনুমোদিত বিধিমালার খসড়ায় বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারদর নির্ধারণ ও শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারী, অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ব্যবস্থাপক, অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড এবং পেনশন ও প্রভিডেন্ড ফান্ডকে সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে মার্চেন্ট ব্যাংক, পোর্টফোলিও ম্যানেজার, সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড, স্টক ডিলার, ব্যাংক কোম্পানি, বীমা কোম্পানি, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রত্যেক ক্যাটাগরির জন্য পৃথক কোটা বরাদ্দ রাখা হবে।
খসড়া সংশোধনীতে বলা হয়েছে, এ পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দ্বারা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত শেয়ারদরের (কাট-অব-প্রাইস) তুলনায় ১০ শতাংশ ছাড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, এ পদ্ধতিতে শেয়ারদর নির্ধারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে রোড-শো অনুষ্ঠিত হবে। ওই রোড-শোতে অংশগ্রহণকারী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ও মতামত আইপিও প্রসপেক্টাসে সংযুক্ত করতে হবে।
মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা :এদিকে কমিশন কোনো মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট হোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হলে তার ব্যবস্থাপনা ফি কাটার বিধান রেখে মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা ২০০১-এর সংশোধনী খসড়া অনুমোদন করেছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি নির্দিষ্ট হারের বেশি লভ্যাংশ প্রদান করতে পারলে নির্দিষ্ট হারে তাকে উৎসাহমূলক বোনাস ফি প্রদানেরও ব্যবস্থা থাকবে।
একই সঙ্গে খসড়ার সংশোধনে মেয়াদি (ক্লোজড এন্ড) ফান্ডের মতো বেমেয়াদি (ওপেন এন্ড) মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচার জন্য পৃথক ট্রেডিং বোর্ড স্থাপনের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশনা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
খসড়ায় নিবন্ধিত কোনো ফান্ড শেয়ারবাজার-বহির্ভূত খাতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারে, তার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বা ফান্ডের মোট আকারের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ স্থায়ী আমানত হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, সব সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে তাদের পরিচালিত প্রতিটি ফান্ডের পোর্টফোলিও প্রতি মাসে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়া সপ্তাহের পরিবর্তে দৈনিক ভিত্তিতে সম্পদমূল্য প্রকাশ করতে হবে।
ফান্ডের লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ধারা সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোনো ফান্ড কখন পুনর্বিনিয়োগ (রি-ইনভেস্টমেন্ট) আকারে লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে তা কমিশন নির্ধারণ করে দেবে। এ ছাড়া লোকসানজনিত প্রভিশনিং ঘাটতি না থাকলে কোনো ফান্ড চাইলে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ প্রদান করতে পারবে।
বেমেয়াদি বা ইউনিট ফান্ডের (ওপেন-এন্ড) বিক্রয় ও পুনঃক্রয় মূল্যের পার্থক্য ৩ থেকে ৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাবও করা হয়েছে খসড়ায়।
এ ছাড়া মেয়াদি ফান্ডকে বিশেষ কোনো অবস্থায় ইউনিট বাই-ব্যাক করে পরিশোধিত মূলধন কমানোর সুযোগ প্রদানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *