ঢাকা: কেউ বললেন, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন নতুবা গ্রেপ্তার দেখান। অথবা মরে গেলে কবর দেখিয়ে দিন। কবর জিয়ারত করব। কেউ বললেন, ভাইকে আর ফেরত চাই না। আমাদের সবাইকে মেরে ফেলুন।
এভাবে কেউ চোখের জলে, কেউ ক্ষোভের সাথে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানালেন ২০১৩ সালের শেষ দিকে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়া ১৯ পরিবারের স্বজনেরা।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে স্বজন হারানো পরিবারগুলো এমন আবেদন জানায়।
নিখোঁজ ১৯ জন হলেন, শাহীনবাগের সাজেদুল ইসলাম সুমন ও এম এ আদনান চোধুরী, বসুন্ধরার জাহিদুল করিম তানভীর, নাখালপাড়ার আব্দুল কাদের ভূইয়া মাসুম, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, কাউসার, কমলাপুরের আসাদুজ্জামান রানা, উত্তর বাড্ডার আল আমিন, সূত্রাপুরের সেলিম রেজা পিন্টু ও সম্রাট মোল্লা, বাংলাবাজারের খালিদ হাসান, বংশালের হাবিবুর বাশার জহির, পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল, চঞ্চল, দক্ষিণ খানের নিজাম উদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম মুন্না, সবুজবাগের মাহবুব হাসান ও কাজী ফরহাদ।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে শেষ সুযোগ হিসেবে সন্তানহারা মুন্নার বাবা সামসুদ্দিন বলেন, ‘আমার জীবিত মুন্নার খোঁজ না দিতে পারলেও অন্তত তার কবর দেখিয়ে দেন। আমি আমার সন্তানের কবর জিয়ারত করতে চাই।’ এতটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পরেন মুন্নার বাবা।
কিন্তু হারিয়ে যাওয়া পিন্টুর বড় বোনের ক্ষোভ প্রকাশ পেল ভিন্নভাবে। তিনি বললেন, ‘আমি ভাইকে আর ফেরত চাই না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলব আমাদের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলুন। এভাবে আর আমরাও বাঁচতে চাই না।’ আর চঞ্চলের সন্তান আহাদের এক কথা, ‘আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’
এ সময় নিখোঁজ আদনানের বাবা রুহুল আমিন গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের কষ্টের কথাগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিন। কেন আমাদের সন্তানগুলোকে এভাবে কেড়ে নিয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে হয়তো তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে।’
সোহেলের সন্তান শোনালো কীভাবে নিখোঁজ হয়েছে তার বাবা। সে বলে, ‘আমার জন্মদিনে শাহবাগে ফুল আনতে গেলে সেখান থেকে নিখোঁজ হন বাবা। তবে আমি এখনো আশায় আছি প্রধানমন্ত্রী আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ পরিবারদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নুর খান লিটন।