ঢাকা: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে আগের চেয়ে তিনগুণ ব্যয় বেড়েছে। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। আর এবার ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বাজেট শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. এনামুল হক বাংলানিউজকে জানান, এবারের পৌরসভা নির্বাচনে ১০০ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। এর আগের বার পৌর নির্বাচনে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। যা এবারের নির্বাচনের প্রায় তিনের একভাগ।
এবারের ব্যয় বেশি ধরার কারণ হচ্ছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তাসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সম্মানী তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী উপকরণের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়েছে।
অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করতে হচ্ছে, যা ব্যয় বাড়ার একটা বড় কারণ বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
ছয় দশমাংশ ব্যয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়:
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে ১০ ভাগের ছয় ভাগ অর্থই ব্যয় ধরা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পেছনে। আর এ অর্থ ব্যয় করা হবে বিভিন্ন বাহিনীর পেছনে। যারা ভোটগ্রহণের দিন এবং ভোটগ্রহণের আগের দুইদিন ও পরের একদিনের (মোট চারদিন) জন্য নিয়োজিত থাকবে।
এনামুল হক জানান, এবারের পৌরসভা নির্বাচনে ১০০ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয়ের মধ্যে ৫৫ কোটি সাত লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে। আর নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ কোটি ৯২ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ মোট ব্যয়ের ১০ ভাগের ছয়ভাগ ধরা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য।
জানা গেছে, ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, প্যাকেট, প্রচারণা সামগ্রী, ম্যানুয়েল পাঠানোর পরিবহন, ফলাফল সংগ্রহ, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল গঠন ও মামলা পরিচালনা, প্রার্থীর তথ্য প্রচার, ব্যালট পেপার মুদ্রণ, ভোটার তালিকা মুদ্রণ, ভোটকেন্দ্রের বেষ্টনী, ভোটগ্রহণের কক্ষ স্থাপন, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, যাতায়াত, ভাতা, অতিরিক্ত সময়ের জন্য পারিশ্রমিক, বিভিন্ন ধরনের সিল, ব্যাগ, গালা, সূতাসহ প্রায় ৬৪টি খাতে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), আনসার-ভিডিপি, এপিবিএন, কোস্টগার্ড, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে পুলিশের পেছনে।
ইসির উপ-সচিব আব্দুল অদুদ বাংলানিউজকে জানান, এবার স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে তিন হাজার ৫৭৩টি কেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১২ থেকে ১৬ জন করে সদস্য মোতায়েন করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত ফোর্স। এছাড়া র্যাব ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আগামী ১৯ ডিসেম্বরের আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে।
বাজেট শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এনামুল হক বলেন, ফোর্স মোতায়েনের ওপর নির্ভর করবে প্রকৃত ব্যয়। কেননা, তাদের মোতায়েন বেড়ে গেলে নির্বাচন ব্যয় আরো বাড়বে। আর মোতায়েন কমলে ব্যয়ও কমবে।
এরই মধ্যে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যয়ের অগ্রিম চাহিদা দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ছকে তাদের চাহিদা পাঠাতে হবে।
এনামুল হক বলেন, অগ্রিম চাহিদা দিতে বলার কারণ হচ্ছে, নির্বাচনের পর চাহিদা পাঠালে অনেক ক্ষেত্রে অর্থ বছর শেষ হয়ে যায়। ওই অবস্থায় তাদের চাহিদা না পাওয়া গেলে অন্য অর্থ বছরের সঙ্গে তাদের ব্যয় অ্যাডজাস্ট করতে হয়। এতে বাজেট প্রণয়নে ঝামেলা বেড়ে যায়।
৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ করবে ইসি। এবারই দেশে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে মেয়র পদে ভোটগ্রহণ হবে। তবে, কাউন্সিলর পদে আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।