বুধবার চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম হিউম্যান রিসোর্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এখন অর্থনীতি খুবই প্রাণোদ্দীপ্ত, অগ্রসরমান এবং একেবারে স্থিতিশীল।
“আমরা লক্ষ্য করছি, ব্যাংকিং খাতের সূচকগুলো দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে এবং এগোচ্ছে। প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল।”
ব্যাংকিং খাতে সৃজনশীল নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চট্টগ্রামের ইন্সটিটিউটটি বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার পাশাপাশি দ্বিতীয় ব্যাংকিং মেলা চট্টগ্রামে আয়োজনের ঘোষণা দেন গভর্নর।
প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে চট্টগ্রাম হিউম্যান রিসোর্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আতিউর দেশে বিনিয়োগ কম হওয়ার সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে কৃষিতে, এসএমইতে, ডিজিটাল টেকনোলজিতে, ই-কর্মাসের নানা কর্মকাণ্ডে। সব দিকে যেহেতু বিনিয়োগ বাড়ছে, সেজন্য হয়ত চোখে পড়ছে না।
“বিনিয়োগ যদি যথেষ্ট না হয়ে থাকে, তাহলে কি করে গত ছয় বছর ধরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক তিন শতাংশ হারে হচ্ছে? অথচ এই সময়ে ইউরোপের কোনো কোনো দেশে ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।”
দেশের ব্যাংকিং খাত এখন যে কোনো চাপ মোকাবেলায় সক্ষম উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, “ব্যাংকিং খাত শক্তিশালী কি না তার অন্যতম পরিমাপ হচ্ছে তার মূলধনের পর্যাপ্ততা। সর্বশেষ হিসেবে ব্যাংকিং খাতের মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রয়োজন আট শতাংশ। সুতরাং ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত শক্তিশালী।”দেশে ‘সবুজ আর্থিক খাত’ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আতিউর বলেন, “আগামী ১১ তারিখে বোর্ড সভায় দুইশ মিলিয়ন ডলার সবুজ বিনিয়োগের জন্য অনুমোদন দেওয়া হবে। যেসব ইন্ডাস্ট্রি নিজেদের গ্রিন করার চেষ্টা করবে, তাদের জন্য আমরা নতুন পাইপলাইন খুলতে যাচ্ছি।”
এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে রোল মডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার আগ্রহ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান।
নানা বাধার মধ্যেও খেলাপি ঋণের হার এক অংকে নামিয়ে আনার কথা জানিয়ে গর্ভনর বলেন, “খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন কাভারেজ রেশিও ৯৫ শতাংশে উন্নীত করতে পেরেছি।
“ব্যাংকিং খাতে কোনো তারল্য সংকট নেই। কলমানি রেট মাত্র তিন চার শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তারল্য নিয়ে কারও কোনো চিন্তা নেই। বরং বেশি তারল্য হয়ে পড়েছে বলে আমাদের সমালোচনা করা হয়।”
শিল্প উদ্যোক্তাদের দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ দিতে উদ্যোগের কথা জানিয়ে গর্ভনর বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশের পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করেছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে তিনশ মিলিয়ন ডলারের একটি লং টাইম ক্রেডিট লাইন খুলেছি।”
উৎপাদন, রপ্তানি, গার্মেন্ট, চামড়া ও ম্যানুফেকচারিং খাতের উদ্যোক্তাদের তিন থেকে পাঁচ শতাংশ সুদে এই ঋণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর আবু হেনা মো. রাজী হাসান, নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিলম মণ্ডল, জনতা ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আবু নাসের চৌধুরী, প্রকল্প পরামর্শক ইকরামুল হক ও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কাজী শফিউল আলম।