কঠোর নজরদারিতে আসছে বনাঞ্চল

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

forest_177229

 

 

 

 

উগ্রপন্থিদের তৎপরতা রুখতে দেশের বিভিন্ন বনাঞ্চল কঠোর নজরদারিতে থাকবে। এ ছাড়া শিল্প এলাকায় ভাসমান মানুষের ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মাদ্রাসার আড়ালে যাতে কেউ জঙ্গি কার্যক্রম চালাতে না পারে_ সে ব্যাপারে তৎপর থাকবেন গোয়েন্দারা। সারাদেশে কমিউনিটি পুলিশের কার্যক্রম আরও জোরালো করার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা জোরদার করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশ কর্মকর্তাদের দিনব্যাপী জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মশালায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্তমান বাস্তবতায় ‘কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে’র প্রয়োজনীয়তার কথাও জোরালোভাবে উঠে আসে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায় স্পেশাল টাস্ক গ্রুপ (এসটিজি) সদস্যরা জঙ্গি-সংক্রান্ত মামলা ও তা তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কাজ করবেন। সম্প্রতি সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে সব জেলায় এসটিজি গঠন করা হয়।

পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে ৩২ জেলার পুলিশ সুপার কর্মশালায় অংশ নেন। এ ছাড়া একাধিক ডিআইজি, ডিবির যুগ্ম কমিশনার ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সব ডিসিও কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র সমকালকে জানায়, এমন একটি সময়ে জঙ্গিবাদবিরোধী এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হলো, যখন রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জেলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশসহ (জেএমবি)
অন্যান্য জঙ্গি গ্রুপ নতুনভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চেকপোস্টে দুই পুলিশ হত্যা, হোসেনী দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি জমায়েতে বোমা হামলা, গোপীবাগে সিক্স মার্ডারে জেএমবির সদস্যরা জড়িত। এমনকি লেখক-প্রকাশকদের ওপর হামলার পর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যদের তৎপরতার ব্যাপারেও অনেক তথ্য গোয়েন্দারা দিচ্ছেন। এ ছাড়া যে কোনো হামলার পরই ইসলামিক স্টেট (আইএস) কথিত ‘দায়’ স্বীকারের বিষয়টি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জানা গেছে, কর্মশালায় পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেছেন, দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান যে কোনো মূল্যে রুখতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশে আইএসের কোনো সাংগঠনিক অস্তিত্ব নেই, আইএসের সমর্থক থাকতে পারে।
গত ২২ অক্টোবর রাজধানীর গাবতলীতে পুলিশ চেকপোস্টে ছুরিকাঘাত করে এএসআই ইব্রাহীম মোল্লাকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ হাতেনাতে মাসুদ নামে একজনকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ পুলিশকে জানায়, ‘বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে তারা গোপন প্রশিক্ষণ নেয়। হাতবোমা ছোড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় গাজীপুরের শালবনে। শালবনে যারা হাতবোমা ছোড়ার প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিল তাদের কোনো একটি গ্রুপ হোসেনী দালানে বোমা ছোড়ে।’ এ ছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর লটমনির পাহাড় থেকে জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের বিপুলসংখ্যক অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ছিল এম-১৬ ও একে-২২ অস্ত্র। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বনাঞ্চলে কেবল বনরক্ষক ও তাদের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী নন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও নজরদারি বাড়াতে হবে। কারা বনাঞ্চলে প্রবেশ করছে_ সে ব্যাপারে পুলিশও তথ্য রাখবে। প্রয়োজনে বনাঞ্চলের নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ত করে বনকে নির্বিঘ্ন রাখতে হবে।

কর্মশালায় উপস্থিত এক পুলিশ সুপার বলেন, রাজধানীতে বাড়ি মালিক, ভাড়াটিয়া, গৃহকর্মী, চালকসহ অন্যদের তথ্য সংগ্রহের মতো ঢাকার আশপাশের এলাকার ভাসমান নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ জরুরি। বিশেষ করে শিল্প এলাকা অনেক ঘনবসতিপূর্ণ। সেখানে ভাসমান নাগরিকদের সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রথমে তাদের কাছে ফরম দেওয়া হবে। প্রয়োজনে সবার গ্রামের ঠিকানায় যোগাযোগ করে ওই তথ্য যাচাই করা হবে।
অন্য এক পুলিশ সুপার বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাদ্রাসার ছাত্ররা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে একই ছাতার নিচে আনা জরুরি। উগ্রপন্থাকে মোকাবেলায় সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। মাদ্রাসার ওপর নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।’

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় জড়িত জেএমবির সদস্যরা জামিনে বেরিয়ে আবার অপারেশনে জড়িয়েছে বলে গোয়েন্দারা বলছেন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যানে পুলিশকে গুলি করে জঙ্গি ছিনতাই অপারেশনে অংশ নেওয়া ফারুকসহ কয়েক জঙ্গি কারাগার থেকে বেরিয়ে আবার নিজেদের সংগঠিত করে। কর্মশালায় বলা হয়, সব ইউনিটে জঙ্গি-সংক্রান্ত মামলার ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খোঁজ নেবেন এসটিজির সদস্যরা। তারা জঙ্গি-সংক্রান্ত মামলার তদন্তের অগ্রগতি, চার্জশিট দাখিল ও কেউ জামিনে বেরিয়ে এলে তাও নজরে রাখবেন এবং পুলিশ সুপারকে প্রতিবেদন দেবেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় ৩২ জেলার এসপিরা ছাড়াও বরিশাল মেট্রোপলিটন কমিশনার লুৎফুর রহমান মণ্ডল, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, বরিশালের ডিআইজি হুমায়ুন কবীর, সিলেটের ডিআইজি মিজানুর রহমান, জয়েন্ট কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম, জয়েন্ট কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *