নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার অভিযোগপত্রে মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পুলিশ চাইলে এ মামলায় আবারও সম্পূরক অভিযোগপত্র দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।
নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির মামলার অধিকতর তদন্ত চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানিতে আজ মঙ্গলবার আদালত এ মন্তব্য করেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের বেঞ্চে এ মামলার শুনানি চলছে।
শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘আমরা এই চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেখে বুঝতে পেরেছি এতে মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে। আমরা মামলার স্বার্থে তা বলব না। তবে আপনারা আইনজীবীরা এ ত্রুটি খুঁজে বের করবেন। কারণ সারা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে এ মামলার দিকে তাকিয়ে আছে।’
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে আজ শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার ও অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মনিরুজ্জামান কবির।
এ বিষয়ে আবেদনকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘শুনানিতে বলেছি আমরা চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেছিলাম। নিম্ন আদালত আবেদনটি যেভাবে নিষ্পত্তি করার দরকার সেভাবে করেননি। প্রধান আসামি নূর হোসেনের যাঁরা সহযোগী ছিলেন, সেই আসামিদের তালিকা দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ অভিযোগপত্রে ওই সব আসামির নাম অন্তর্ভুক্ত করেনি। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩-এ বি ৩ ধারা অনুযায়ী চার্জশিট দেওয়ার পরও নতুন তথ্য পেলে মামলার অধিকতর তদন্তের স্বার্থে পুনরায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া যায়।’
আবেদনের বিষয়ে আইনজীবী মন্টু ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নজরুলের স্ত্রী বিউটির করা মামলায় ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। যেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়েছে। আমরা বিচারিক আদালতে এ বিষয়ে আবেদন করলে তা খারিজ করে দেওয়া হয়। তাই গত ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে এ আবেদন করেছি। এর ওপর শুনানি শুরু হয়েছে।’
এর আগে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় অধিকতর তদন্ত চেয়ে ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেন নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। গত ২৯ নভেম্বর এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। আজ মঙ্গলবারও শুনানি হয়।
মামলার বিবরণ
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। পরে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে র্যাবের কয়েকজন সদস্যের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। ঘটনার পরপরই ভারতে পালিয়ে যান মামলার প্রধান আসামি ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন। তখন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সঙ্গে নূর হোসেনের পালিয়ে যাওয়ার কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড গণমাধ্যম প্রকাশিত হয়। কিন্তু এসব বিষয়ে পলাতক নূর হোসেনের কোনো জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। তাঁর জবানবন্দি ছাড়াই এ ঘটনায় করা দুটি মামলায় ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে র্যাবের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ অনেকের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পেলেও ঘটনার অন্তরালে আরো কেউ ছিল কি না, তা অপ্রকাশিতই রয়ে গেছে।
এ অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ১৮ মাস পর গত ১৫ নভেম্বর রাতে সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৬ নভেম্বর আদালতে শুনানি শেষে ১১ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নূর হোসেনকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিহতদের স্বজনরা।