ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ৯ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এখন পর্যন্ত একটি পৌরসভায়ও একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। প্রার্থিতা ইস্যুতে দলটির সিনিয়র নেতাদের কোন্দল চরম আকার নিয়েছে।
প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পৌরসভা নির্বাচন। আগামী বৃহস্পতিবার (০৩ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। অথচ ময়মনসিংহের পৌর এলাকাগুলোতে এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠে আসেননি বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী। এজন্য দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকাকে দায়ী করছে বিএনপি। অন্যদিকে মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মন জয় করতেই বেশি ব্যস্ত রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ময়মনসিংহের সব নেতারা মনোনয়নের জন্য ঢাকায় ঘুরছেন। আবার কেউ কেউ এলাকায় আছেন। জেলা ও উপজেলা নেতাদের একসঙ্গে বসার সুযোগ নেই। এ কারণে বিভিন্নভাবে তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ০৩ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের উত্তর জেলা বিএনপির অন্তর্ভুক্ত ফুলপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল ও গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল। উত্তরের আহবায়ক খুররম খান চৌধুরী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যকার পুরনো বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন।
ফুলপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মোতাহার পক্ষ কেন্দ্রে প্রস্তাব করেছেন রাকিবুল হাসান সোহেলের নাম। আর খুররমের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে আমিনুল হকের নাম। গত দু’টি পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে এবং একটি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন আমিনুল। তাকে এবারও প্রার্থী করলে দলের ভরাডুবি নিশ্চিত বলে মনে করেন মোতাহার পক্ষের নেতারা।
ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে খুররম খান চৌধুরী চাইছেন মেয়র পদে ফিরোজ আহমেদ ভুলুকে মনোনয়ন দিতে। আর মোতাহারের পক্ষের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ নুরুল কবির শাহীন চান শামসুল হাকিম বকুলকে। রয়েছেন আরো একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীও। তাই এখানেও একক প্রার্থী নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
গৌরীপুর পৌরসভায় মেয়র পদে চার মনোনয়ন প্রত্যাশীকে নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে উত্তর জেলা বিএনপি। মোতাহার বলয়ের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ মেয়র প্রার্থী হিসেবে চান সুজিত কুমার দাসকে। আর উত্তরের আহবায়ক খুররম খানের পছন্দ জাপা থেকে আসা শরাফত হোসেন পাঠানকে। স্থানীয় পৌর বিএনপির সমর্থনে রয়েছে সাংবাদিক বেগ ফারুকের দিকে।
নান্দাইল পৌরসভা নির্বাচনে বর্তমান মেয়র এ এফ এম আজিজুল ইসলাম পিকুলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন মোতাহার অংশের নেতারা। আর খুররম প্রার্থী করতে চান আলমগীর হোসেন সরকারকে। তবে দু’টি মামলায় সোমবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন পিকুল।
ঢাকায় অবস্থান করা ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন তালুকদার মোবাইলে বলেন, নান্দাইলের মেয়র পিকুল গ্রেফতার হবার পর নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি য়েছে। সভা-সমাবেশ করে প্রার্থী চূড়ান্ত করার পরিবেশ নেই। ফলে জেলা ও পৌর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে প্রার্থী তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণেও একই অবস্থা বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির অন্তর্ভুক্ত মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, ভালুকা, গফরগাঁও ও ফুলবাড়িয়া পৌরসভায়ও মেয়র পদে রয়েছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। একক প্রার্থী বাছাইয়ে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে সভাপতি এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াহাব আকন্দের মধ্যে।