ষ্টাফ করেসপনডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
শ্রীপুর অফিস : অতিরিক্ত ঘুষ দাবী করায় গাজীপুরের শ্রীপুরের সাব রেজিষ্ট্রারকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে দলিল লিখক এবং ক্ষুব্ধ জনতা ।
ঘুষের বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার ও বুধবার এ সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে দিনভর চলে আলোচনা,সমালোচনা ও উত্তেজনা। দলিল লিখকরা অতিরিক্ত ঘুষ প্রদানে অসম্মতি জানালে সাব রেজিষ্ট্রার দলিল রেজিষ্ট্রি না করায় এ উত্তেজনার সৃষ্টি হয় । এক পর্যায়ে তাকে অবরুদ্ধ করলে এবং তার জনৈক সহকারীকে মারতে উদ্যত হলে পরিস্থিতির চরম অবনতি দেখা দেয় । এ ঘটনায় অফিসের নকল নবিশ ফারুক বাদী হয়ে পরে শ্রীপুর থানায় উপজেলা দলিল লিখক ও ভেন্ডার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মন্ডলের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে।
দলিল লিখক , ভোক্তভোগী সাধারন জনতা এবং সাব রেজিষ্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দলিল সম্পন্ন করতে সাব রেজিষ্ট্রারকে ঘুষ প্রদান একটি ওপেন সিক্রেট বিষয়ে পরিনত হয়েছে । ঘুষ ছাড়া এ অফিসে কোন দলিল রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন করা যায় না । সাব রেজিষ্ট্রা এবং তার কয়েকজন সহকারীর অনৈতিক এ ঘুষ নেওয়ার কারনে দলিল লিখক এবং সাধারন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নানা ভাবে হয়রানীর শিকার হয়ে আসছে । এ ব্যাপারে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলারও সাহস পায় না ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দলিল লিখক জানান, যে কোন দলিল রেজিষ্ট্রি হলেই সাব রেজিষ্ট্রারকে ঘুষ হিসেবে প্রতি লাখে দুই হাজার টাকা দিতে হবে। এটাকা আদায় করে থাকে নকল নবিশ ফারুক। এক ধরনের নিয়মেই পরিনত হয়েছে এ অফিসে। এ ছাড়া অফিসের বাহিরে কোন দলিল সম্পন্ন হলে (কমিশন হিসেবে পরিচিত) দলিল প্রতি কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় । আর ঢাকায় গিয়ে কোন দলিল সম্পন্ন করলে ক্ষেত্র ভেদে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকাও ঘুষ লেনদেন হয় বলে একটি সুত্র জানায় । নিয়ম অনুযায়ী, অফিসের বাইরে বা ঢাকায় কোন দলিল সম্পন্ন করতে হলে সাব রেজিষ্ট্রারকে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে তা সম্পন্ন করার কথা । কিন্ত শ্রীপুরের সাব রেজিষ্ট্রার এসব ক্ষেত্রে নিজে না গিয়ে তার কয়েকজন সহকারীকে দিয়ে কাজ সারেন। অফিসের ভলিউম দিয়ে তাজ উদ্দিন, ওয়াজ উদ্দিন, আলমগীর বা অন্য কোন নকল নবিশকে সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে দলিল দাতা ও গ্রহিতার টিপসহি নিয়ে আসা হয় । সাথে সাথে ঘুষের টাকাও নিয়ে আসে এরা ।
জানা গেছে, একটি দলিল রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন করতে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী যে টাকা বা ফি লাগার কথা, ঘুষ প্রদানের অবাধ রীতি চালু থাকার কারনে সাধারন মানুষকে অতিরিক্ত অনেক টাকা গুনতে হয় । আর বাধ্য হয়ে ঘুষ প্রদান করে নিরবে ভোগান্তি সহ্য করেও কেউ এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করেন না ।
দলিল লিখকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাধারন দলিল প্রতি লাখে ২ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও সন্তুষ্ট নন শ্রীপুরের সাব রেজিষ্ট্রার জামিনুল হক। ভোক্তভোগিরা জানায় শ্রীপুর সাব রেজিষ্ট্রার ও তার মিডিয়া ম্যান নকল নবিশ ফারুক ঈদ উপলক্ষ্যে দলিল প্রতি ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত ঘুষ দাবী করে এবং এছাড়া দলিল লিখক শাহজাহান মন্ডলের নিকট ১টি পাওয়ার দলিলে অতিরিক্ত ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করে। মঙ্গলবার দলিল লিখক শাহজাহান মন্ডলের কাছে ১টি পাওয়ার দলিলে ১ লাখ টাকা অতিরিক্ত ঘুষ দাবী করে সাব রেজিষ্ট্রার জামিনুল হক। এছাড়া প্রতিদলিলে ২ হাজার টাকার স্থলে অতিরিক্ত আরো ৫ হাজার টাকা ঘুষ প্রদানের জন্য দলিল লিখকদের বলে । এতে দলিল লিখকরা তার দাবীকৃত টাকা দিতে অপারগতা জানিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে । ফলে তিনিও অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোন দলিলে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকেন। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কেউ কেউ দলিল রেজিষ্ট্রি করলেও দিনভর বেশিরভাগ দলিল লেখক দলিল রেজিষ্ট্রি করা বন্ধ রেখে সাব রেজিষ্ট্রার জামিনুলকে অবরুদ্ধ করে রাখে। ইফতারের সাথে সাথে উত্তেজিত জনতা ও দলিল লিখকরা সম্মিলিতভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে সাব রেজিষ্ট্রারের উপর হামলে করে লাঞ্ছিত করে। এ সময় নকল নবিশ ফারুক ফেরাতে গেলে তাকেও উত্তম মধ্যম দেয়।
সংবাদ পেয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে নকল নবিশ ফারুক বাদী হয়ে পরে শ্রীপুর থানায় উপজেলা দলিল লিখক ও ভেন্ডার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মন্ডলের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে করে। উদ্ভুত পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে এক পর্যায়ে সাব রেজিষ্ট্রার বাধ্য হয়ে গতকাল বিকেলে দলিল রেজিষ্ট্রি করে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সাব রেজিষ্ট্রার জামিনুল হক মারপিট ও ঘুষ দাবীর কথা অস্বীকার করে ।
শ্রীপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লিখক এবং ভোক্তভোগী সাধারন মানুষ ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন।