পৌর নির্বাচনের তফসিল পেছানোর সম্ভাবনা কম। এর মানে, ৩০ ডিসেম্বরেই ভোট নিতে চায় নির্বাচন কমিশন। সরকারি দল নির্বাচনী প্রচারে এমপিদের অংশগ্রহণ চায়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করে ভোট গ্রহণ ১৫ দিন পেছানোর দাবি জানিয়েছে। ইসির বক্তব্য, এমপিদের ভোটের ময়দানে থাকার সুযোগ দিতে হলে আইনি জটিলতা দেখা দেবে। এ মুহূর্তে এই সমস্যার সুরাহা সম্ভব নয়। দুই প্রধান রাজনৈতিক দলই তাদের দাবি নিয়ে আগামীকাল রোববার নির্বাচন কমিশনে যাবে।
জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র এমপিরাও একই দাবিতে কথা বলতে নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার কথা বলেছেন। ক্ষমতাসীন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিও গতকাল শুক্রবার নির্বাচনের তফসিল পেছানো ও এমপিদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
ইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এমপিদের প্রচারের সুযোগ দিতে হলে আচরণবিধি সংশোধন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে পুনঃতফসিল অনিবার্য। বাস্তবতা হলো, ৩০ ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন শেষ করতে না পারলে জুনের আগে এ নির্বাচন আয়োজনের আর সুযোগ পাচ্ছে না ইসি। এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, সুযোগ থাকলে তফসিল পেছাতে কমিশনের আপত্তি থাকবে না। তবে এ মুহূর্তে সে সুযোগ নেই। নিষ্ঠুর বাস্তবতার কারণে অনেক সময় যুক্তিসঙ্গত দাবিও গ্রহণ করা যায় না। তিনি আরও বলেন, পৌরসভার মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জানুয়ারিতে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচনের আয়োজন সম্ভব নয়। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশজুড়ে একাধিক পাবলিক পরীক্ষা এবং জুনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করতে হবে। ফেব্রুয়ারির ৭ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে এসব ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে।
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্বাহী ক্ষমতা রয়েছে। এমপিদের নেই। অতীতে দেশে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপিদের প্রচারে নামতে বাধা ছিল না। এবার দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন হবে। এ নির্বাচনে এমপিদের প্রচারে নামতে বিধিনিষেধ আরোপ অযৌক্তিক।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন ১৫ দিন পিছিয়ে দেওয়ার ‘শর্ত’ দিলেও ভেতরে ভেতরে তারা অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সাত সাংগঠনিক বিভাগের জন্য সাতটি কমিটিও গঠন করেছে। জোটের শরিক দলের সঙ্গে প্রার্থী সমন্বয় করতেও তারা আলাদা কমিটি গঠন করেছে। বিএনপি তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেছে, ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রায় ৫০ লাখ নতুন ভোটার মাত্র দুই দিনের জন্য ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
ইসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা প্রচারকাজে এবং ভোট গ্রহণের সময় প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে কমিশনের কাছে অনেক অভিযোগ জমা পড়ে। একাধিক ধাপে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের। এসব বিবেচনায় এবার এমপিদেরও প্রচারকাজে নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখা হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে কমিশন কর্মকর্তারা বলছেন, তফসিল ঘোষণার পর বিধি সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। কমিশনের উচিত, নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে এমপিদের প্রচারকাজের বাইরে রাখার ব্যাপারে অবস্থান পরিবর্তন না করা। তারা আরও বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধি পরিবর্তনের কোনো নজির নেই। তবে ড. শামসুল হুদা কমিশনের সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের চার দিন আগে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় ভুল ধরা পড়ে। তখন ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
তফসিল ঘোষণার পর বিধি সংশোধনে জটিলতার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বলেন, এটা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। এ নিয়ে কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচন ১৫ দিন পেছানোর যে দাবি করেছে বিএনপি, একই কারণে তাও গ্রহণযোগ্য নয়।