ভোটের মাঠে থাকতে চান এমপিরাও

Slider জাতীয়

1448517850

 

 

 

 

আসন্ন পৌর মেয়র নির্বাচনে এমপিরাও ভোটের মাঠে থাকতে চান। তাদের যুক্তি, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি চেয়ারপারসন থেকে শুরু করে সব নেতাই দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালাবেন_ এমপিরা ঘরে বসে থাকবেন, এটা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। সাধারণত সরকারবিরোধী দলগুলো নির্বাচনী প্রচারে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ (সবার জন্য সমান সুযোগ) দাবি করত, এখন সরকারি দল ও তাদের শরিক এমপিরা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ চাইছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল আগামী রোববার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও সংসদীয় বোর্ডের যৌথ সভায় দীর্ঘ আলোচনা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সঙ্গত কারণেই এখন নির্বাচন কমিশনের কপালে ভাঁজ পড়েছে, এখন কী করবেন তারা। ইতিমধ্যেই আচরণবিধি সংশোধন করে এমপিদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ রহিত করা হয়েছে। এখন নতুন করে বিধি সংশোধন করলে নির্বাচনও পিছিয়ে দিতে হতে পারে। আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শেই ইসি নির্বাচন বিধি সংশোধন করেছিল। এখন আইন মন্ত্রণালয়ই চাইছে, ভোটের মাঠে এমপিদের থাকার সুযোগ রাখা হোক। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল সাক্ষাৎ করেন ইসি কার্যালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ও যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলী। এ সময় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবসহ সরকারের নির্বাচনবিষয়ক একাধিক আইনবিষয়ক পরামর্শক উপস্থিত ছিলেন। নতুন করে বিধি সংশোধনের যেসব জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, ইসির কর্মকর্তারা আইনমন্ত্রীকে তা বিস্তারিত অবহিত করেন।

আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠক এমপিদের পৌর নির্বাচনের প্রচারে অংশগ্রহণের সুযোগ চায় আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নির্বাচন কমিশনে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে ক্ষমতাসীন দলটি। আগামী রোববার এই প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও সংসদীয় বোর্ডের জরুরি বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় এ নিয়ে ঐকমত্য সৃষ্টির প্রয়োজনে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
বৈঠকে নেতারা প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে এমপিদের প্রচারে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। দলের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, এইচ টি ইমাম, মোহাম্মদ নাসিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, র আ ম ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী প্রমুখ এ নিয়ে কথা বলেন।
নেতারা বলেছেন, এবারের পৌর নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে ও দলীয় প্রতীকে হলেও এমপিদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়নি, যা এ-সংক্রান্ত পৌর নির্বাচন নীতিমালার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তা ছাড়া দলীয় এমপিরা একই সঙ্গে দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধি। তাদের নির্বাহী ক্ষমতা না থাকায় প্রচারে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা থাকার কথা নয়।

নেতারা আরও বলেছেন, এই নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা, এমনকি খালেদা জিয়ারও নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। কেবল সরকারি দলের জন্য এই বাধা দেওয়া হলে সে ক্ষেত্রে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ থাকবে না। সব নেতাই এ-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি সংশোধনের পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
প্রার্থী মনোনয়ন দেবে তৃণমূল, চূড়ান্ত করবে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড
বৈঠকে পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী মনোনয়নের ফর্মুলা চূড়ান্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে দলের জেলা, উপজেলা ও শহর/পৌর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের পরামর্শ নিয়ে প্রতিটি পৌরসভায় একজন করে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরে দল গঠিত কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে দল মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।
অবশ্য মনোনয়ন বোর্ডে মেয়র প্রার্থীদের নাম পাঠানোর আগে সাত বিভাগের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে গঠিত দলের সাতটি বিভাগীয় কমিটি নামের তালিকা পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাইও করবে। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা এই কার্যক্রম সমন্বয় করবেন। এ সময় আগামী রোববারের মধ্যে দলীয় সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনীত প্রার্থীর নাম পাঠানোর জন্য তৃণমূল কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে ‘স্থানীয় সরকার/পৌর মেয়র মনোনয়ন বোর্ড’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দলের ১১ সদস্যের সংসদীয় বোর্ডের সঙ্গে আরও আটজনের নাম যুক্ত করে এই বোর্ড গঠন করা হবে। নতুনভাবে বোর্ড সদস্য মনোনয়নের দায়িত্ব দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ওপর ন্যস্ত করা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

বৈঠকে দলের জেলা কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গকরণের কাজ শেষ করার বেলায় ব্যর্থতার জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। সাংগঠনিক সম্পাদকরা না পারলে তিনি নিজেই জেলা থেকে আসা কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করে অনুমোদন দেবেন বলেও জানান। বৈঠকে রাজশাহী জেলা ও মহানগর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর, নোয়াখালী, নাটোর, পঞ্চগড়, বরগুনা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, লক্ষ্মীপুর, মাগুরাসহ ১১টি জেলা কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি কমিটিতে গোঁজামিল থাকার কারণে সেগুলো ফেরত পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *