বর্তমান সরকারের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন ও বাংলাদেশকে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ধযুগ ধরে প্রথাসিদ্ধ ব্যাংকিংয়ের ধারা অক্ষুণ্ন রেখে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং, দারিদ্র্য লাঘব, নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার এক নতুন ধারা চালু করেছে যা সমগ্র আর্থিক খাতকে প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি দিয়েছে এক মানবিক চেহারা। এরই মধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সমাজের নিম্নআয়ের মানুষদের আর্থিক সেবার আওতায় আনার কৌশল গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে দেশের কৃষক, গরিব ও অসহায় মানুষদের মাত্র দশ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্গাচাষি, প্রান্তিক চাষি ও নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিশেষ ঋণ সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষি, এসএমই ও উৎপাদনমুখী পরিবেশবান্ধব খাতে অর্থায়ন বাড়ানো হয়েছে। এসব খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে বেশ কয়েকটি পুন:অর্থায়ন তহবিল। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্নপূরণে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে করা হয়েছে ডিজিটাইজড। জনস্বার্থে মোবাইল ব্যাংকিং, স্কুল ব্যাংকিং, গ্রিন ব্যাংকিং, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা উদ্যোগ দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ব্যাংকগুলো তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কার্যক্রমের মাধ্যমে নিয়েছে বিভিন্ন মানবিক কর্মসূচি। এসব অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক উদ্যোগের ফলে দেশের ভেতরে চাহিদা বেড়েছে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জনজীবনে আর্থিক সেবার আরো প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে আর্থিক খাতের সেবা ও পণ্য জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা, ব্যাংকিং পণ্য ও সেবা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানো, জনগণের কাছে ব্যাংককে সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপস্থাপন, তরুণ ও যুব সমাজকে ব্যাংকমুখী করা তথা ‘একটি ব্যাংকিং জাতি গড়ার প্রত্যয়ে’ স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে প্রথমবারের মত আয়োজিত হতে যাচ্ছে ‘ব্যাংকিং মেলা বাংলাদেশ ২০১৫’। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুষম বণ্টন সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে আরো এগিয়ে যাওয়াই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
একটি দক্ষ, কার্যকর ও নিরাপদ ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থার যথাযথ তদারকির সাথে সাথে বৈশ্বিক ব্যাংকিং মানদ- অর্জন ও তা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে যা আর্থিক খাতকে দিয়েছে দৃঢ়তা ও স্থিতিশীলতা। আর্থিক খাতের এই নানামুখী সংস্কার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপসমূহ গ্রহণের ফলেই গত ছয় বছরে গড়ে ৬.২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের সাথে সাথে নিশ্চিত হয়েছে সামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন। সারাবিশ্বও তাই বাংলাদেশের উন্নয়নমুখী ব্যাংকিং সেবা এবং সার্বিকভাবে বাংলাদেশের যুগান্তকারী পথচলা সূচনার জন্য স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে।
আগামী ২৪-২৮ নভেম্বর ২০১৫ পাঁচ দিনব্যাপী বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠেয় ব্যাংকিং মেলায় থাকছে দেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংক, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্টল। এতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও থাকছে আর্থিক পণ্য ও সেবার প্রদর্শনী, আর্থিক শিক্ষা বিষয়ক আয়োজন, আর্থিক বিষয়ে প্রাণবন্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রতিদিন সেমিনার, আলোচনা, গবেষণা, বিশ্লেষণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থিক খাতের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা তুলে ধরবে এবং দেশের সাধারণ মানুষকে সহজেই আর্থিক সেবা নিতে উদ্বুদ্ধ করবে।