রাতুল মন্ডল,শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে গ্যাস সম্প্রসারণ প্রকল্পের গ্যাস লাইনের নকশার ওপর স্থাপিত অননুমোদিত স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে গাজীপুর জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারের এবং শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটারের দুটি গ্যাস লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের নকশার ওপর হালকা স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল।
শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মাসুম রেজা জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশে শ্রীপুর উপজেলার যেসব মৌজায় গ্যাস সম্প্রসারণ লাইনের নকশা অনুযায়ী হালকা স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসএম মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে গাজীপুরের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সাজিদ আনোয়ার, গাজীপুরের আরডিসি মোঃ শরীফুল আলম তানভীর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শরীফুল ইসলামসহ স্থানীয় র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় ওই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের গ্যাস পাইপ লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পে গাজীপুরের অংশে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে।
প্রকল্পের গ্যাস লাইন চিহ্নিত করার পর থেকেই ওইসব স্থাপনাগুলো নির্মাণ শুরু হয়। ব্যাক্তিগত অথবা সংঘবদ্ধভাবে নামমাত্র আবদি জমিতেও এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। আদালতের নির্দেশনা ও গণমাধ্যম এবং এলাকাবাসীর কাছ থেকে এরকম অভিযোগ আমরা পেয়েছি। গ্যাস লাইন স্থাপনের জমির উপর কিছু লোকজন অধিক অর্থ হাতিয়ে নিতেই অবৈধভাবে শত শত স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এসব নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
এসব স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সহ-সম্পাদক হারুন অর-অর রশীদ ফরিদ। তিনি জানান, গ্যাসের পাইপলাইন প্রকল্পের অনুমোদনের খবর পেয়ে এক শ্রেণির অসাধু চক্র প্রকল্পের ম্যাপ অনুযায়ী ওই জমিতে অস্থায়ী ঘর বাড়ি নির্মাণ করে। সরকারের কাছ থেকে জমির উচ্চ মূল্য নেওয়ার জন্য কয়েকটি চক্র জমির মালিকের কাছ থেকে পাইপ লাইনের জমি ইজারা নেন। পরে সেসব জায়গায় অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে তুলেন। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী, বরমী, গোসিঙ্গা, গাজীপুর ইউনিয়নের ধনুয়া এবং টাঙ্গাইল জেলার সখীপুরের পাঁচটি গ্রামের ফসলের জমিতে ওই চক্রের লোকজন খুবই নিম্নমাণের সামগ্রী ব্যবহার করে এসব টিনের ছাপরা ঘর তুলেছেন।
এরই প্রেক্ষিতে সরকারের রাজস্ব রোধকল্পে এবং অপচয় রোধে চলতি বছরের ১৭মে উচ্চ আদালতে তিনি একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। ১৮ মে গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মহোদয়কে ওইসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, স্থাপনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করে ত্রিশ দিনের মধ্যে প্রতিবদেন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
গত ছয় মাসেও প্রতিবদেন জমা না দেয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগে দুই জেলা প্রশাসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারী করা হয়। ১৫ নভেম্বর উচ্চ আদালতের যৌথ বেঞ্চ বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ আশরাফুল আলম কামাল তাদের বিরুদ্ধে এ আদেশ দেন। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শুরু হয়।