কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর র্যা ব-পুলিশ পাহারার মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সে করে দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দুই যুদ্ধাপরাধীদের মৃতদেহ, যাদের নৃশংসতা থেকে একাত্তরে এলাকার মানুষও রেহাই পায়নি।
আর একাত্তরে চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর দাফন হবে রাউজানের গহিরা গ্রামে। তার লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সেদিকেই যাচ্ছে।
প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর রোববার প্রথম প্রহরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এই দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এর ঠিক দুই ঘণ্টা পর রাত ২টা ৫৫ মিনিটে মৃতদেহ নিয়ে চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরের পথে রওনা হয় অ্যাম্বুলেন্স।
অবশ্য নিরাপত্তার স্বার্থে দুই পথেই দুটি করে মোট চারটি অ্যাম্বুলেন্স যায়। সামনে পেছেনে ছিল র্যাব ও পুলিশের ব্যাপক নিরাপত্তা।
কারাগার থেকে দুই যুদ্ধাপরাধীর লাশ বের করার সময় বাইরে উপস্থিত জনতা উল্লাস প্রকাশ করে। হাজারো কণ্ঠে জয় বাংলা স্লোগান শোনা যায় এ সময়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের পরিবারের ইচ্ছানুযায়ী ডেডবডি স্ব স্ব এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা মহানগর এলাকা পার হবে। তারপরও আমাদের পুলিশ-র্যা বের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। তারা সর্বশেষ গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।”
যেসব জেলার উপর দিয়ে গাড়িগুলো যাবে, সেসব জেলার পুলিশও অ্যাম্বুলেন্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান বলেন, “পুরো রাস্তায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী গ্রামের বাড়িতে তাদের দাফন করা হবে।”
মহানগর পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (চকবাজার জোন) আর এম ফয়জুর রহমান জানান, মুজাহিদের গাড়ি গাবতলী দিয়ে আরিচা হয়ে যাবে। সেখানে থাকবে বিশেষ ফেরি।
আর সাকা চৌধুরীর গাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়েই রাউজানের পথে যাবে।
বিচারের শেষ পর্যায় পর্যন্ত অপরাধ অস্বীকার করে আইনি লড়াই চালিয়ে আসা এই দুই যুদ্ধাপরাধী শেষ চেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাদের সেই আবেদন নাকচ হয়ে গেলে রাতেই দণ্ড কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়।
রাত ১০টার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ফাঁসিতে আর বাধা নেই। এরই মধ্যে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের পরিবারকে দেখা করতে ডাকা হয় কারাগারে। নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি লাশ বহনের জন্য চারটি অ্যাম্বুলেন্স এনে রাখা হয় কারাগারের ফটকে।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে দাফনের জন্য ফরিদপুরের শহরে তার দলের নেতাকর্মীদের পরিচালিত একটি মাদ্রাসায় প্রস্তুতি শুরু হয় রাতেই।
ফরিদপুর জামায়াতের আমির আব্দুল তাওয়াফ জানান, স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা মিলেই শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার আইডিয়াল ক্যাডেট মাদ্রাসার জমিতে মুজাহিদকে দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অন্যদিকে সাকা চৌধুরীর দাফনের প্রস্তুতি শুরু হয় রাউজানের গহিরা গ্রামে, তার ভাই সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবরের পাশে।
ওই গ্রামে সাকাদের বাড়ি ‘বাইতুল বিলাল’ এর সদস্যরা জানান, কিছুদিন আগে সাইফুদ্দিন কাদের মারা যান। পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছানুযায়ী তার কবরের পাশেই সাকা চৌধুরীর লাশ দাফনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
লাশ আনাকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর ও রাউজান- দুই জায়গাতেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয় মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর গ্রামের বাড়িতে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এ দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে। একই মঞ্চে পাশাপাশি তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং সাম্প্রদায়িক হত্যা-নির্যাতনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড হয় মুজাহিদের।
আর রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহ, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজাফফর ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে অপহরণ করে খুনের দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় আসে।