নোয়াখালীর দক্ষিণে হাতিয়া উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের অগভীর মোহনায় পাললিক মাটির একটা দ্বীপপুঞ্জ; বল্লার চর, কমলার চর, চর ওসমান ও চর মুড়ির সমষ্টি নিঝুম দ্বীপ। বহুদ্বীপের সমন্বয় এই দ্বীপের মোট আয়তন প্রায় একশত পঁয়ষট্টি বর্গ কিলোমিটার যার স্থল সীমানা মাত্র চল্লিশ বর্গ কিলোমিটার বাকীটা জলাভুমি। নিঝুম দ্বীপের পুর্বনাম চর ওসমান। উনিশ শত পঞ্চাশের দশকে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া একটা মাঝিদলের নজরে আসে একটা মালুময় চর তারা সেটার নাম দেন বাউলার চর। এই বাউলার চর পরবর্তিতে রূপান্তর হয় বল্লার চর নামে।
১৯৭৪ সালে সরকারের বন বিভাগ নয় হাজার একর জমি নিয়ে নিঝুম দ্বীপের উত্তর দিকে একটি বিশ বছর মেয়াদী বনায়ন কার্যক্রম শুরু করে। যা বর্তমানে একটি গভীর বনাঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই বনাঞ্চলের প্রধান আকর্ষন চিত্রল হরিণ। অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের মধ্যে বুনোশুয়োর, ছোট লেজওয়ালা বাঁদর উল্লেখযোগ্য আর আছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ যার মধ্যে কেওড়া, গেওয়া, বেইন, বাবুল ও পশুর উল্লেখযোগ্য। তবে সবচে বেশি দেখা যায় কেওড়া। কেওড়া গাছের পাতা হরিণের প্রিয় খাবার। নিঝুম দ্বীপের দক্ষিণ উপকুল যেহেতু বঙ্গোপসাগরের সাথে মিশেছে তাই এখানে কদাচিৎ তিমিও দেখা যায়।
জীববৈচিত্রের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সরকার ২০০১ সালে জাহাজমারা রেঞ্জের দশহাজার একর বনভূমি সহ মোট চল্লিশহাজার একর বনভূমিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করেছে। বর্তমানে নিঝুম দ্বীপ পর্যটনের অপার সম্ভাবনা নিয়ে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। শীতকালে এই দ্বীপে নানা প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। সন্ধ্যার আকাশ ছেয়ে যায় অসংখ্য নাম না জানা পাখির ডানায়। কিচিরমিচির আওয়াজ আর শান্ত প্রকৃতির এই দ্বীপ শুধু নিঝুমই যেনো ভুবনমোহিনীও।
কিভাবে যাবেনঃ
সদরঘাট থেকে হাতিয়া নিয়মিত লঞ্চ আছে বিকেল পাঁচটায় ছাড়ে। আপনি হাতিয়া থেকে একটা ট্রলার ভাড়া করে সোজা নিঝুম দ্বীপে যেতে পারেন। নিঝুম দ্বীপের আবাসিক হোটেলগুলো যেখানে তার নাম নামার বাজার। আবাসনের ঝামেলা এড়াতে ঢাকা থেকে বুকিং দিয়ে গেলেই ভালো কারণ পর্যাপ্ত হোটেল রিসোর্ট সেখানে এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি।