বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন। অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-০০৬ ফ্লাইটে করে বিকেল ৫টায় হজরত শাহজালাল রহ: আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন তিনি। বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন দলের সিনিয়র নেতারা। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও নেত্রীকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে জড়ো হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দলীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশে ফিরে খুব কম সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক কাজে মনোনিবেশ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দল গোছানোর কার্যক্রম নিয়ে সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন তিনি। নেয়া হবে বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্ত। দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনও করতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া।
দলের সিনিয়র এক নেতা জানিয়েছেন, দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর জন্য সরকার বিএনপিকে দায়ী করে যেসব বক্তব্য দিয়েছে, বেগম জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তার জবাব দেবেন। একইসাথে তিনি আবারো দ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে সংলাপের আহবান জানাবেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্যে না পৌঁছায় ফের দল গোছানোর যে কাজ শুরু হয়েছে, তা দ্রুত শেষ করতে চায় বিএনপি। নতুন বছরে কিছু জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারি ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের দ্বিতীয় বছর পূর্তিতে দেশজুড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা চলছে। খালেদা জিয়া নিজেও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সমাবেশ করতে পারেন।
খালেদা জিয়ার সফর নিয়ে বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক নয়া দিগন্তকে বলেছেন, সাংগঠনিকভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডন সফর ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লন্ডনে তিনি বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে দল পুনর্গঠন নিয়ে কথা বলেছেন। দলের চেয়ারপারসনকে তারেক রহমান জানিয়েছেন তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার কথা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আবারো কিভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায় তা নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে পরিবর্তনের কথা বলেছেন তারেক রহমান। এ ক্ষেত্রে দলের মহাসচিব নির্বাচন, স্থায়ী কমিটিতে পরিবর্তন আনা, নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে সাচ্চা নেতাদের পদায়নের বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তারা।
জানা গেছে, বয়স্ক কিংবা অযোগ্য বলে দল থেকে কাউকে বাদ দেয়ার পক্ষপাতী নন খালেদা জিয়া। এ ক্ষেত্রে মূল নির্বাহী কমিটির বাইরে এক বা একাধিক বিকল্প স্থান তৈরি করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দেশে ফিরেই নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক ডাকবেন বেগম খালেদা জিয়া। বৈঠকে লন্ডন সফরের আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হবে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে সিনিয়র নেতাদের নতুন বার্তা দেবেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ড, ব্লগারদের ওপর আক্রমণ, বিএনপি শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার, দল পুনর্গঠনসহ নানা বিষয়ে দলের অবস্থান ও করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন নয়া দিগন্তকে বলেছেন, দেশের ক্রান্তিকাল ও সঙ্কটকাল বিবেচনা করে সম্পূর্ণ সুস্থ না হয়েই দেশে ফিরছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশে ফিরে তিনি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেবেন। তার নির্দেশে দল গোছানোর কাজেও গতি আসবে।
খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা দাবি : দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন ড. আসাদুজ্জামান রিপন। একইভাবে তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কথা উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা নিয়ে দলের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদারে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।