যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) আওতায় গঠিত ফোরামের দ্বিতীয় বৈঠকে বাংলাদেশের লক্ষ্য বিভিন্ন খাতে সে দেশের অধিকতর বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। বিনিয়োগের পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশি পণ্যের স্থগিত থাকা জিএসপি পুনর্বহাল এবং তৈরি পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে জোরালো দাবি জানাবে বাংলাদেশ। আগামী ২৩ নভেম্বর ওয়াশিংটনে টিকফা ফোরামের দ্বিতীয় বৈঠক শুরু হবে। দু’দিনের বৈঠকের প্রথম দিনে টিকফার মূল আলোচনা হবে। দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেশটির বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগকারীরা বৈঠক করবেন। ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র সচিব, শ্রম সচিব ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ অন্যান্য সদস্যকে নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন সমকালকে বলেন, বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হবে। বিশেষ করে ব্লু ইকোনমিতে বিনিয়োগের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের জিএসপি পুনর্বহালের প্রস্তাব দেওয়া হবে। এ ছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সমকালকে বলেন, টিকফা বৈঠকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের জোর দেওয়া উচিত। তবে শুধু বাজার সুবিধা বিষয়ে ভাবলে হবে না, বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। এ জন্য কোন কোন খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ আছে তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়ছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ দেশে ২৮০ কোটি
ডলারের বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বছরের শীর্ষ দশ বিনিয়োগকারী মধ্যে রয়েছে দেশটি। জানা গেছে, টিকফা বৈঠকে তথ্যপ্রযুক্তি, হালকা প্রকৌশল, চামড়া, জাহাজ নির্মাণ ও কৃষিসহ বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগের প্রস্তাব তুলে ধরা হবে।
টিকফা বৈঠকের আগে গত সপ্তাহে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস বল্গুম বার্নিকাট আলোচনা করেন। ওই দিন আলোচনা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, টিকফা বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের স্থগিত থাকা জিএসপি ফেরতের জোর দাবি জানানো হবে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জিএসপি সুবিধা পাওয়া অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের শ্রমমান, নিরাপত্তা ও কারখানার পরিবেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় জিএসপি পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে সরকার আশা করছে।
টিকফা বৈঠকে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) কাঠামোয় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতামত ও ভাবনা জানতে চাওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং এ বিষয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দুই দেশ ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর ওয়াশিংটনে টিকফা সই করে। এর পরে গত বছরের ২৮ এপ্রিল টিকফার প্রথম বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।