আজ শনিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। সেদিন সশস্ত্র বাহিনী দেশপ্রেমী জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করেছিল। এর পর থেকে প্রতিবছর ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। এবারও যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণী দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৫’ উপলক্ষে আজ বিভিন্ন সেনানিবাস ও স্থাপনার মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে তিন বাহিনী প্রধানগণ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
দিনটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিত সংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা জানাবেন।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আয়োজনে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে বৈকালীন সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। এতে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতিগণ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, প্রাক্তন উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিগণ, প্রতিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, ঢাকা এলাকার সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান, ২০১৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, নির্বাচিত রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সব বীরশ্রেষ্ঠর উত্তরাধিকারী, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তাদের উত্তরাধিকারীরা, উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তা এবং তিন বাহিনীর চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে।
রাষ্ট্রপতির বাণী :রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে সশস্ত্র বাহিনীকে একটি উঁচু পেশাদার, দক্ষ ও সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করেন। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নেতৃত্বের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে কঠোর অনুশীলন, পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে অর্জিত গৌরব সমুন্নত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলেও রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে ২১ নভেম্বর বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করেন। মুক্তিবাহিনী, বিভিন্ন আধা সামরিক বাহিনী ও দেশপ্রেমী জনতা এই সমন্বিত আক্রমণে একতাবদ্ধ হন। ঐক্যবদ্ধ এই আক্রমণের মুখে দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। বর্তমান সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরুর বিষয়টিও স্মরণ করেন।
সেনানিবাসে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ :দিনটি উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের রাস্তাগুলো যানজটমুক্ত রাখতে সেনানিবাসে অবস্থানকারী ব্যক্তিবর্গ এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের বহনকারী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চালকদের আজ সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সেনানিবাস এলাকা দিয়ে চলাচল পরিহারের অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সেনাকুঞ্জের বৈকালীন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত কর্মকর্তাদের বেলা পৌনে ৩টা ও অন্যান্য অতিথিদের বিকেল সোয়া ৩টার মধ্যে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।