সম্প্রতি রাজনীতি শিরোনামের সিনেমায় পিয়া বিপাশার নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু তার কিছুদিন পর এ সিনেমা থেকে বাদ পড়েন এ অভিনেত্রী।
তারপর জানা যায়- কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রাজনীতি সিনেমা থেকে বাদ পড়তে হয়েছে প্রিয়া বিপাশাকে। এ নিয়েও দেশীয় মিডিয়া বেশ ফলাও করে খবর প্রকাশ করে। এমনকি এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড় উঠে।
এ সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিলেন বিষাক্ত ইয়াবা সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজক। এবারো অভিনেত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়েছেন সিনেমার দুই প্রযোজক আকাঁশ-রনি ও পরিচালক এম কে জামান। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এ সিনেমা থেকে বাদ দিয়েছেন অভিনেত্রী সাদিয়া আফরিনকে। দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইনকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সাদিয়া বলেন, ‘সিনেমার মহরত হওয়ার কিছুদিন পর এ সিনেমার প্রযোজক মঞ্জুরুল ইসলাম রনি ফোন করে আমাকে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেন। আমি বলেছি, আপনাদের এ ধরনের কন্ডিশন থাকলে আমাকে আগে জানাতেন। আমি কাজ করতাম না। এ সব কাজ আমি করতে পারব না। এরপর তিনি আমাকে বলেন, ঠিক আছে এটা না পারলে তুমি ১০ লাখ টাকা এ সিনেমায় ইনভেস্ট করো। এ দুইটার মধ্যে একটা তোমাকে করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে সিনেমার পরিচালক এম কে জামান ও প্রযোজক সিরাজুল ইসলাম আকাশ আমাকে একই কথা বলেন। তারা আমার সিদ্ধান্ত জানার জন্য বার বার ফোন করেন। আমার কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আমাকে জানিয়েছেন তারা নতুন নায়িকা নিবেন। শিল্পীসমিতিতে এ বিষয় নিয়ে বসার জন্য আমি তাদের বলেছি।’
গত ২৫ আগস্ট রাজধানীর শ্রুতি স্টুডিওতে এ সিনেমার মহরত অনুষ্ঠিত হয়। একই সময় আনুষ্ঠানিকভাবে সাদিয়াকে বিষাক্ত ইয়াবা সিনেমার নায়িকা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। এ সময় এ সিনেমার অভিনেত্রী রেহেনা জলি, নৃত্য পরিচালক, ফাইট ডিরেক্টর জুম্মানসহ সিনেমার পরিচালক, প্রযোজকসহ অন্যান্য শিল্পীরাও উপস্থিত ছিলেন।
সিনেমার মহরতের একদিন আগে মগবাজারের একটি অফিসে বসে সাদিয়াকে এ সিনমোয় চুক্তিবদ্ধ করানো হয়। কিন্তু এখন হঠাৎ কেন সাদিয়াকে বাদ দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে সিনেমার পরিচালক এম কে জামান বলেন, ‘আমার জানা মতে সাদিয়া আফরিন খুব ভালো শিল্পী। সে ভালো অভিনয় করে। গল্পের পরিবর্তনের কারণে সাদিয়া বাদ দিয়ে অন্য নায়িকা নিয়েছি। যেহেতু সাদিয়াকে সাইন করিয়েছি তাই এ হাউজের অন্য সিনেমায় সাদিয়াকে দিয়ে কাজ করাবো।
অনৈতিক কাজের জন্য তাকে আপনারা প্রস্তাব দিয়েছেন এমন অভিযোগ করেছেন সাদিয়া। এ বিষয়ের সত্যতা কতটুকু? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। আমি কোনোদিন তাকে বলিনি। এমনকি আমার প্রযোজকও বলেনি। যখন সাদিয়াকে বাদ দিয়ে অন্য নায়িকা নেয়ার কথা উঠছে তখনই এ ধরনের কথা বলা হচ্ছে।’
একটি সিনেমায় কাজের জন্য একজন শিল্পীকে চুক্তি করিয়ে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশ করা হয়। এরপরই যদি তাকে ওই সিনেমা থেকে বাদ দেয়া হয় তা হলে ওই শিল্পীকে কী ছোট করা হয় না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ সবই নির্ভর করে প্রযোজকের উপর। পরিচালক এ কথায় রাজি না হলে দেখা যায় পরিচালককেই পরিবর্তন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রযোজক মঞ্জুরুল ইসলাম রনির সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অন্য প্রযোজক সিরাজুল ইসলাম আকাশের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।
সিনেমা থেকে বাদ পড়লেই নায়িকা যেমন সাধারণভাবে বলে থাকেন তাকে কু-প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তেমনি পরিচালক- প্রযোজকও বলে থাকেন সিনেমার চরিত্রের সঙ্গে যায় না বলে বাদ দেয়া হয়েছে।
চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের অনেকেই এ বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না। তাদের ভাষায় সিনেমার গল্পের সঙ্গে যায় না এ বিষয়টি আগেই ভাবা উচিৎ। সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ করিয়ে অথবা পত্র-পত্রিকায় নিউজ প্রকাশের পর কেন বাদ দিবে? এতে করে শিল্পীর সন্মান নষ্ট হয়।
কিছু লোক অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে আসে। এরাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্রশিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যতদিনে এ ধরনের অসৎ লোকদের সরানো না যাবে, ততদিন ঢাকাই চলচ্চিত্র ধ্বংসের দিকেই যাবে বলেও মনে করেন সিনেমা বোদ্ধারা।