আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে তৃণমূলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিরোধিতা করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। কেন্দ্রের নির্দেশ পেয়ে আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করছেন নেতারা। আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকার উদ্দেশ্যেই এ কৌশল নিয়েছেন তারা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে একটি বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেবেন। খুব সম্ভবত তারা নির্বাচনে যাবেন।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয় বিশ্লেষণ করতে নেতাদের ও দলের থিঙ্কট্যাঙ্ককে নির্দেশ দিয়েছেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির সামনে তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এ নির্বাচন বর্জনের চেয়ে অংশ নেওয়াতেই বেশি কল্যাণ দেখছেন তারা।
জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় ২৪৫টি পৌরসভার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপি নেতারা। খালেদা জিয়া চলতি মাসের মাঝামাঝি দেশে ফিরবেন জানিয়ে নেতারা বলেন, এরপর নির্বাচনে যাওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা আসতে পারে। এরই মধ্যে ঈদ ও পূজার শুভেচ্ছা বিনিময়সহ নানাভাবে ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ করেছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জেলায় জেলায় দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা নেতারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করছেন। দলবেঁধে এই আত্মসমর্পণের মাধ্যমেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারকাজ এগিয়ে রাখছেন।
এদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সামনে ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন নেতারা ও থিঙ্কট্যাঙ্ক। প্রথমত, দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনকে ক্ষমতাসীনরা নানাভাবে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি। একই সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতাদের মাথায় মামলার বোঝাসহ নানামুখী হয়রানির আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, দেশব্যাপী দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় মাথাচাড়া দেওয়া অনৈক্য ও বিভাজনের কারণে ওই নির্বাচনের ফল বিপক্ষে যেতে পারে। তৃতীয়ত, জামায়াতে ইসলামী ভোট ব্যাংক রক্ষা করতে সব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। এ তিনটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করার কথা বললেও সমস্যা সমাধানের কৌশল সম্পর্কে কিছুই জানাননি নেতারা। এ ছাড়া নির্বাচনে না গেলে তৃণমূলে নেতাকর্মী ধরে রাখাও কঠিন হবে বলে দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বুধবার কারারুদ্ধ হওয়ার আগে সমকালকে বলেছিলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে তার দলের প্রার্থীরা শতকরা ৯০ ভাগ এলাকায় জয়ী হবেন। দলীয় প্রতীকে পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নৌকা মার্কার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে চায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সরানোরও দাবি জানান এই নেতা।
দলের স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা হলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এতে অংশ নেওয়া হবে কি-না, সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান সমকালকে বলেন, চেয়ারপারসন দেশে ফিরলেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এদিকে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, বিএনপি পৌর নির্বাচনে অংশ নেবে। সরকারকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেওয়া হবে না। সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।
জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও নগর বিএনপির সভাপতি মারুফুল ইসলামসহ ছয় নেতা আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে গেছেন। ২৬ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৪৪ নেতাকর্মী ও লক্ষ্মীপুরের ১৫ বিএনপি নেতা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাদেরও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বরিশাল, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঝালকাঠি, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপি নেতারা দলবেঁধে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।