১৪৫ রানের বিশাল জয় বাংলাদেশের

Slider খেলা

 

2015_11_07_18_32_27_zZobON0uhSimQgF1YxcYHhXlrdOvXm_original

 

 

 

 

ঢাকা:  প্রস্তুতি ম্যাচে ২৭৭ রান করেও হারের কারণে শঙ্কা বেড়ে গিয়েছিল; কিন্তু আসল লড়াইয়ে এসে নিজেদের সামনে জিম্বাবুয়েকে দাঁড়াতেই দিলেন না মাশরাফিরা। ২৭৩ রান করার পর জবাব দিতে নামা জিম্বাবুয়েকে ৩৬.১ ওভারে মাত্র ১২৮ রানেই অলআউট করে দিল মাশরাফি অ্যান্ড কোং। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারেরমত ৫ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়েকে একাই গুঁড়িয়ে দিলেন সাকিব আল হাসান।

২৭৩ রানের চ্যালেঞ্জ। প্রস্তুতি ম্যাটে ২৭৭ রান তাড়া করে জয়ের তরতাজা স্মৃতি নিয়ে অবশ্য ব্যাট করতে নেমেছে জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যানরা। যদিও শুরুতে চাপে রয়েছে তারা। স্বাগতিক দুই বোলার মুস্তাফিজুর রহমান আর আরাফাত সানির বলে উইকেট ধরে রাখতে পারলেও রান তোলার গতি বেশ মন্থর।

মুস্তাফিজের স্লোয়ার আর কাটারের সামনে বার বার পরাস্ত হতে দেখা যাচ্ছিল জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার লুক জংউই এবং চামু চিভাবাকে। তবে মুস্তাফিজ দারুন একটি সুযোগ মিস করেন খেলার পঞ্চম এবং নিজের তৃতীয় ওভারে। জংউই রিটার্ন ক্যাচ দেন তাকে; কিন্তু সেই ক্যাচ আর হাতে জমাতে পারলেন না তিনি। আবার আরাফাত সানির ঘূর্ণি বলেও বেশ অস্বস্তিতে ব্যাট করতে হচ্ছে তাদের। তবে উইকেট কামড়ে থাকার পন করেই যেন তারা ব্যাট করে যাচ্ছে।

মুস্তাফিজকে দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করলেও দ্বিতীয় ওভারেই অপরপ্রান্তে স্পিনার নিয়ে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি। বল তুলে দেন আরাফাত সানির হাতে। সানি প্রথম ওভার মেডেনও দেন। তবুও সাফল্য পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাকে।

 

যদিও শুরুতে মন্থর গতিতে হলেও, ধীরে ধীরে রান বাড়িয়ে চলছে সফরকারীরা। তবে, সাকিব এসেই ভাঙলেন জিম্বাবুয়ের ওপেনিং জুটি। নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ক্যাচ তুলতে বাধ্য করলেন চামু চিভাবাকে। লং অনে ক্যাচ উঠলে দৌড়ে আসেন নাসির আর লিটন। শেষ মুহূর্তে নাসির সরে গেলে ক্যাচটা তালুবন্ধী করেন লিটন। জিম্বাবুয়ের ৪০ রানে পড়ল প্রথম উইকেট। ২৩ বলে ৯ রান করে ফেরেন চিভাবা।

লুক জংউইয়ের সঙ্গে জুটি বাধার জন্য উইকেটে নামেন ক্রেইগ আরভিন। ফতুল্লায় প্রস্তুতি ম্যাচে ৯৫ রান করেছিলেন তিনি। সেই স্মৃতি তো এখনও তরতাজা। তবে ফতুল্লায় তো আর সাকিবকে খেলতে হয়নি! সুতরাং, মিরপুরে এসে সাকিবের বলে বোকা বনে গেলেন। স্কুপ খেলতে গিয়ে ব্যাটে ঠিক মত শটটা খেলতে পারলেন না। মাঝ ব্যাটে লেগে ক্যাচ উঠে গেলে মিড অনে। নাসির ক্যাচটা লুফে নিলেন খুব সহজেই। ১৩ বলে ২ রান করে আউট হয়ে গেলেন ক্রেইগ আরভিন। ৪৮ রানে পড়লো জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় উইকেট।

 

দ্রুত দুই উইকেটের পতন ঘটলেও ওপেনার লুক জংউই বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন বাংলাদেশের বোলারদেও জন্য। ৫১ বলে ৩৯ রান করে ফেলেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আল আমিন হোসেনের বলেই লুক জংউই প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন। আল আমিনের অফসাইডের অনেক বাইরে দিয়ে ওয়াইড লাইনে বলটি চলে যাচ্ছিল। জংউই খেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে। ৫৪ রানে ঘটলো তৃতীয় উইকেটের পতন।

আবারও সাকিব শো। সাকিবের ঘূর্ণিতে আবারও বোকা বনে গেলেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। এবার তার শিকার হলেন শন উইলিয়ামস। ১৮তম ওভারের শেষ বলটি (সাকিবের ৬ষ্ঠ ওভার) অনেকটাই নীচু হয়ে আসছিল। বুঝতেই পারলেন না শন উইলিয়ামস। খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল আঘাত হানে উইকেটে। ৬৫ রানে ঘটলো চতুর্থ উইকেটের পতন। উইলিয়ামস আউট হলেন ১৩ বলে ৮ রান করে। সাকিব নিলেন ৩ উইকেট।

এলটন চিগুম্বুরার সঙ্গে মিলে সিকান্দার রাজা জুটি বাধেন। জিম্বাবুয়ে ইনিংসের বলতে গেলে শেষ ভরসা এই জুটি। এ দু’জনের ওপরই প্রায় সকল ভার এসে পড়েছিল জিম্বাবুয়েকে সঠিক ট্র্যাকে ফেরানোর জন্য।

কিন্তু, মাশরাফি যখন স্বরূপে আবির্ভূত হন, তখন তো আর প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের ক্রিজে টিকে থাকারও অধিকার নেই। ফলে সিকান্দার রাজাও উইকেট দিতে বাধ্য হলেন। ২৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই বাউন্স হয়ে আসা বলটিতে ব্যাট ছোঁয়ানোর চেষ্টা করেন সিকান্দার। বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় মুশফিকের গ্লাভসে। আউটের আবেদন করতেই আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার। ৭৯ রানে পড়লো ৫ম উইকেট।  রাজা ফিরলেন ২৫ বলে ৩ রান করে।

আবারও মাশরাফি শো। এবার নড়াইল এক্সপ্রেসের শিকার হলেন ম্যালকম ওয়ালার। জিম্বাবুয়ের টেল এন্ডারদের ওপর যেভাবে চড়াও হলেন মাশরাফি, তাতে সফরকারীদের নাভিশ্বাস ওঠারই জোগাড়। ২৮তম ওভারের চতুর্থ বলেই নাসিরের হাতে ওয়ালারকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন মাশরাফি। অফসাইডের বলটি কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে নাসিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে দেন ওয়ালার। ৮৩ রানে পড়লো ৬ষ্ঠ উইকেট। মাশরাফি পেলেন দ্বিতীয় উইকেট। ওয়ালার আউট হলেন ১০ বলে ১ রান করে।

ওয়ালারের উইকেট পড়ার পর গ্রায়েম ক্রেমারকে নিয়ে ভালোই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন এলটন চিগুম্বুরা। ৩৭ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন এ দু’জন। জিম্বাবুয়ে ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি। তবে সাকিব আল হাসান অ্যকশনে ফিরে আসতেই ভেঙে গেলো ক্রেমরা এর চিগুম্বুরার সকল প্রতিরোধ। সাকিবের বলে এলবিডব্লিুউ হওয়ার আগে আউট হলেন ২১ বলে ১৫ রান করে। ১২০ রানে পড়ে সপ্তম উইকেট।

তিনাশে পানিয়াঙ্গারা এসে টিকলেন দেড় ওভার মাত্র। ৯ বল খেলে ৫ রান করে আবারও হলেন সাকিবের শিকার। নিজের দশম ওভারের পঞ্চম বলে পানিয়াঙ্গারাকে বোল্ড করলেন সাকিব। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম ৫ উইকেটের দেখা পেলেন সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও বল হাতে জিম্বাবুয়েকে একাই গুঁড়িয়ে দিলেন তিনি।

৩৬তম ওভারের পঞ্চম বলে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে চিগুম্বুরাকে এলবিডব্লিউ করে ছাড়েন নাসির হোসেন। এরপরই শেষ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে ইনিংস। কারণ, সফরকারী দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুতুম্বামি ফিল্ডিং করার সময় আহত হয়ে হাসাপতালের বিছানায় এখন। ফলে ৯ উইকেটেই (অলআউট) ১২৮ রানে শেষ হয়ে গেলো জিম্বাবুয়ের ইনিংস। আর ১৪৫ রানের বিশাল জয় পেলো বাংলাদেশ।

সাকিব আল হাসানের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম ৫ উইকেটছাড়াও ২ উইকেট পেয়েছেন মাশরাফি। একটি করে উইকেট নিয়েছেন আল আমিন হোসেন এবং নাসির হোসেন। দুর্দান্ত বোলিং করলেও উইকেটশূন্য থাকতে হয়েছে মুস্তাফিজকে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *