
গাজীপুর: জাতীয় নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা করার জন্য সরকারের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষ সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ খুরুজ মজমার নামে ২ থেকে ৪ জানুয়ারী ইজতেমা করছে বলে অভিযোগ এনে অপরপক্ষ ২২ থেকে ২৪ জানুয়ারী ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করেছে। এই বিষয়ে সরকারের উচ্চ মহল থেকে স্থানীয় প্রশাসনে চিঠি চালাচালি শুরু হলেও সমস্যা সমাধানে কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না।
আজ রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সাদপন্থীদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য জানানো হয়।
তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের(সাদপন্থী) গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো; সায়েম বলেন, খুরুজের মজমার নামে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন প্রতারণার শামিল। দেশের বিভিন্ন মসজিদ ও মাদারাসায় তারা বিভিন্ন পোষ্টার চিঠি ও ব্যানার করে বিশ্ব ইজতেমা বলে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা বিষয়টি আইনশৃংখলা বাহিনী ও সরকারকে অবগত করেছি। স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়, ধর্ম মন্ত্রনালয়, নির্বাচন কমিশনার, গাজীপুর পুলিশ কমিশনারের কাছে আমরা প্রতিবাদ লিপি পাঠিয়েছি । আমরা নির্বাচনের আগে টঙ্গীর ময়দানে এক পক্ষের ইজতেমা বন্ধ করার আহবান জানাচ্ছি। তা না হলে জুবায়ের পন্থীরা খুরুজের নামে ইজতেমা করলে আমরা ২২,২৩ ও ২৪ জানুয়ারী ইজতেমা করব বলে সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে শুরায়ে নেজামের( জুবায়ের পন্থী) মিডিয়া সমন্বয়কারী মো: হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেছেন, আমরা খুরুজ মজমা করছি। এটা ইজতেমা নয়, ইজতেমার প্রস্তুতি। সাদপন্থীরা মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমরা সরকারী সিদ্ধান্তে একমত। জাতীয় নির্বাচনের পরেই ইজতেমা করব। তিনি আরো বলেন, গত বছর সাদপন্থীরা টঙ্গীর ময়দানে আর ইজতেমা করবে না বলে সরকারকে লিখিত দিয়ে ইজতেমা করেছে। এবার তারা কেরাণীগঞ্জে জোড় ইজতেমা সহ সকল বিভাগে ইজতেমা করেছে। সুতরাং টঙ্গীর ময়দানে ইজতেমা নিয়ে তাদের মাথ্যা ব্যাথা থাকা উচিত নয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের ২রা নভেম্বর র্ধম উপদেষ্টার সভাপত্বিত্বে তাবলীগের উভয় পক্ষের সাথে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ২০২৬ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা হবে না। নির্বাচন হওয়া পর নতুন সরকারের তত্ত্বাবধানে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত প্রতিপালনের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। জুবায়ের পন্থীরা এই প্রথম জোড় ইজেতমার পর ২০২৬ সালের ২ থেকে ৪ জানুয়ারী খুরুজের মজমা করার জন্য কাজ শুরু করে। তার সারাদেশে চিঠি দিয়ে সাথীদের খুরুজের মজমায় আসার জন্য অনুরোধ করছেন। এই খবরে সাদপন্থীরা জুবায়ের পন্থীদের বিরুদ্ধে খুরুজের নামে ইজতেমা করার অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ধর্ম উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কশিনারের নিকট আবেদন করে আগামী ২২ থেকে ২৪ জানুয়ারী বিশ্ব ইজতেমা করার জন্য তারিখ জানিয়ে সহযোগিতা চায়।
এ বিষয়ে বিশ্ব ইজতেমার আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বপ্রাপ্ত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের(জিএমপি) অপরাধ দক্ষিন বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। দরখাস্তগুলো আমাকে একটু দেন। আমি দেখি।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আলম হোসেন বলেন, বিশ^ ইজতেমা নির্বাচনের পরে হবে। নির্বাচন কমিশনের পরিপত্রে ধর্মীয় কাজের ক্ষেত্রে স্পষ্ট করে সব কিছু বলা হয়েছে। ধর্মীয় কাজে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, আচরণ বিধি মেনে করতে পারবে। ইজতেমা নিয়ে দুই পক্ষ থেকে আমার কাছে অফিসিয়ালী কোন চিঠি আসে নাই। আসলে মন্তব্য করতে পারব।
প্রসঙ্গত: ১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীতে এক পর্বে বিশ^ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০১১ সালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় দুই ভাগে ইজতেমা শুরু হয়। ২০১৮ সালে জুবায়ের পন্থী ও সাদপন্থীদের মধ্যে বিরোধী ও সংঘাত হওয়ায় একজন মুসল্লী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এরপর থেকে জুবায়ের পন্থীরা এক পর্ব ও সাদপন্থীরা আরেক পর্ব ভাগ করে নিয়ে ইজতেমা করা শুরু করে। ২০১৮ সালে বিশ^ ইজতেমা ময়দানে জুবায়ের পন্থী ও সাদপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ২০২৪ সালে ৪ জন সহ এই পর্যন্ত ৫ জন মুসল্লী নিহত ও আহত হয় কয়েকশত মুসল্লী। গত বছর ইজতেমা ময়দানে বড় হত্যাকান্ডের কারণে সৃষ্ট জটিলতায় দুই ধাপে তিন পর্বে বিশ^ ইজতেমা সমাপ্ত হয়। ২০২৬ সালের ইজতেমার প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে এ বছর জুবায়ের পন্থীরা ইজতেমা ময়দানে ও সাদপন্থীরা ঢাকার কেরানীগঞ্জে জোড় ইজতেমা সম্পন্ন করে। সরকারী ঘোষণা অনুয়ায়ী জাতীয় নির্বাচনের পর বিশ^ ইজতেমা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
