দেশকে অস্থির করার জন্য পেছন থেকে কিছু লোক কাজ করছে : মির্জা ফখরুল

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ৯১ সাল থেকে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। এখন আমার বয়স ৮০’র কাছাকাছি। এটি আমার শেষ নির্বাচন, আল্লাহ যদি কবুল করেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই সঙ্গে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনেই আপনারা নির্ধারণ করবেন আগামী পাঁচ বছর এ দেশটি কারা পরিচালনা করবে। নির্বাচনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত ১৫ বছর ধরে দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে এবং শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে অতি ধনী করার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে লুটপাট করেছে। বিদেশে টাকা পাচার করেছে এবং সামগ্রিকভাবে গোটা দেশের মানুষকে তারা বঞ্চিত করেছে।

তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, তাদের ক্ষমতাকে আরও চিরস্থায়ী করার জন্য বিভিন্ন আইন পাস করেছে। যে আইনগুলোতে আমরা কথা বলতে পারতাম না। আমাদের কথা বলার স্বাধীনতাকে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পত্র-পত্রিকা মিডিয়াগুলো স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারত না। এমনকি তারা তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে।

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের মানব কল্যাণ পরিষদ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে স্থানীয় আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশ এখন একটি ক্রান্তিকাল সময়ের মধ্যে পার হচ্ছে। বিভিন্ন রকম কথাবার্তা উঠছে। বিভ্রান্ত সৃষ্টি হচ্ছে, আন্দোলন হচ্ছে। দেশকে অস্থির করার জন্য পেছন থেকে কিছু লোক কাজ করছে। আমাদের এই সময়ে একটু সাবধান থাকতে হবে। যেন আবার অন্ধকারের দিকে না চলে যেতে হয়। আমাদের সাবধান থাকতে হবে আমরা নিজেরা যেন বিভেদ ও চক্রান্তকারীদের হাতে না পড়ি। নাহলে দেশ আমাদের আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নির্বাচনকে ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা যেন করতে না পারে সেদিকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন বিএনপির প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। অন্যান্য রাজনীতি দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আলেম-ওলামাদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়েছে। কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। আমরা এই সময়গুলো পার হয়েছি। আমি নিজে ১১ বার কারাগারে গেছি। আমার অপরাধ আমি গণতন্ত্র চেয়েছি। আমার অপরাধ আমি সত্যের প্রতিষ্টা চেয়েছি। আলেম-ওলামাদের যেন নির্যাতন করা না হয় সেটা চেয়েছি। সেসময় আলেম-ওলামারা রাস্তাঘাটে নিরাপদে চলতে পারত না। সবসময় তারা ভয়ে ভয়ে থাকত। কখন আবার জঙ্গি বলে ধরে নিয়ে নিয়ে যায়। আমাদের ভাইদেরকে, ছোট ছোট শিশুদেরকে কিভাবে সেদিন গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শুধুমাত্র একটা অপরাধ, সেদিন তারা তাদের দাবিগুলো চেয়েছিল। কি একটা ভয়াবহ অবস্থা ছিল।

মির্জা ফখরুল বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের ছাত্র-জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। কিন্তু এর মূল্য দিতে হয়েছে অনেক। ওই আন্দোলনে প্রায় দুই হাজারের মতো ছাত্র-জনতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। রক্তে লাল হয়ে গেছে ঢাকা শহর। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা কারাগারে দুই বছর আটক করে রাখা হয়েছিল এবং যে ঘরের মধ্যে তাকে রাখা হয়েছিল সেখানে ইদুর দৌড়াদৌড়ি করত। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয়নি। এরপরে যখন কোভিড হয় তখন তারা নেত্রীকে কারাগার থেকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসল। পিজি হাসপাতালে তিনি দুই বছর ছিলেন। আবার পিজি হাসপাতাল থেকে গৃহবন্দি অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসা হলো। ছয় বছর কারাবন্দি অবস্থা ছিলেন তিনি। ৫ আগস্ট তিনি মুক্ত হয়েছেন। সেই নেত্রী আজকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে। এই নেত্রী তার সারাটা জীবন মানুষের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছে, কথা বলেছেন, কারাগারে গেছেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তিনিই প্রথম সাংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করেছিলেন। তিনি প্রথম সংবিধানে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস লিখে কাজ করতে হবে এ কথা লিখে ছিলেন। যখন শেখ মুজিবরের আমলে কেউ ইসলামের কথা বলতে পারত না। তারপরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রথম মুসলিম উম্মার ব্যাপারে তিনি সামনে এগিয়ে আসেন এবং মুসলিম উম্মাহকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। তিনি সমস্ত মুসলিম দেশগুলোতে গিয়ে ছিলেন। আমাদের পবিত্র মক্কা শরীফে নিম গাছ রোপণ করেছিলেন। সেটা এখন জিয়া গাছ হিসেবে পরিচিত। আমি দুইবার ওমরা করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ওইখানেও ইসলামের কাজের জন্য তিনি তার অবদান রেখে গেছেন। আমাদের সম্পর্কে অনেকেই অনেক কথা বলে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করে, কিন্তু আমরা এদেশের ৯৫ ভাগ মানুষ মুসলমান। আমাদের ধর্ম আমাদের কৃষ্টি, আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা করার জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছি।

তিনি আরও বলেন, অত্যন্ত কষ্টের সঙ্গে, বেদনার সঙ্গে আমাদের ছোট ভাই, আমাদের সন্তান ওসমান হাদী যে প্রাণ দিয়েছে তাকে স্মরণ করি। আমরা আমাদের রংপুরের সাঈদকে স্মরণ করি। আমরা স্মরণ করি ওয়াসিমকে চট্টগ্রামে, যারা জুলাইয়ে আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে। আমরা সবসময় ১৯৭১ সালে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিল তাদের স্মরণ করি।

মহাসচিব বলেন, আপনারা দেখেছেন আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব নির্বাসিত অবস্থা থেকে দেশে আসার পরে কিভাবে স্বতঃস্ফুর্তভাবে জনগণ ঢাকার রাজপথে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন আমি বিশ্বাস করি আমাদের আলেম-ওলামারা সবাই সেটাকে পছন্দ করেছেন। তিনি সেখানে বারবার ইসলামের কথা বলেছেন, আল্লাহর কথা বলেছেন। আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এদেশে কোরআন ও সুন্নাহর বাইরে কোনো আইন আমরা করতে দেব না। এটা আমাদের কমিটমেন্ট। এই কমিটমেন্ট আমরা সবসময় করে এসেছি। আমি যখন চরমোনাই পীর সাহেবের সঙ্গে বসে ছিলাম এখানে আমরা ১০টা বিষয়ের মধ্যে একমত হয়েছিলাম তার মধ্যে এটা একটা। অনেকেই আপনাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলে আমরা নাকি কোরআন ও সুন্নাহর আইন চাই না। নাউজুবিল্লাহ। আমরা সবসময় কোরআন-সুন্নাহর মধ্যে থাকতে চাই। আমাদের বংশ সেটা। আমাদের রক্তের মধ্যে সেটা। আমি গর্বিত যে আমি একজন মুসলমান। ইসলাম শান্তির ধর্ম, আমরা শান্তি চাই। আমরা চাই যেন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। আমরা চাই এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক, যেখানে আমি আমার ইবাদত শান্তিতে করতে পারব, আমার ধর্মচর্চা শান্তিতে করতে পারব। আমার ভবিষ্যৎ বংশের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনা করতে পারব। এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে আপনারা এয়ারপোর্টের কথা বলেছেন। আমরা যদি সরকারে যেতে পারি তাহলে অবশ্যই ঠাকুরগাঁওয়ে পুনরায় বিমানবন্দর চালু করা হবে। আপনারা মেডিকেল কলেজের কথা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলেছেন সবগুলোই প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। এই ঠাকুরগাঁওয়ে যতগুলো স্কুল-কলেজ, মাদরাসা রয়েছে আমি বিশ্বাস করি তার ৯০ শতাংশ আমাদের অবদান রয়েছে। আপনারা জানেন বিএনপি একটা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। খতিব-ইমাম, মুয়াজ্জিনদের সামাজিক মর্যাদা জীবনমানে উন্নয়ন। খতিব ইমাম মুয়াজ্জিন সাহেবদের মাসিক সম্মানী ভাতা প্রদান করা হবে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে। ধর্মীয় উৎসবে বিশেষ ভাতা প্রদান করা হবে। দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমার শেষ কথা আপনাদের কাছে। আবার কখন দেখা হবে আমি জানি না। আমার এই নির্বাচন শেষ নির্বাচন। বয়স হয়ে গেছে। এরপরে আমার পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব হবে কিনা জানি না। আমি আপনাদের কাছে এইটুকু অনুরোধ করতে চাই আপনার যদি মনে করেন যে আমি অতীতে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, কাজ করতে পেরেছি তাহলে আমাকে দয়া করে সাহায্য করবেন সহযোগিতা করবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন।

এসময় জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমিন, সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরীফ সহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *