প্রথম আলোয় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় ১৭ জন গ্রেপ্তার, ৩১ জন শনাক্ত

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


রাজধানীর কাওরান বাজারে প্রথম আলোর অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি।

তিনি বলেন, গত শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টা থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত শাহবাগ মোড় থেকে কারওয়ান বাজার এলাকায় বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী প্রথম আলো ও পরে ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালেও বিপুল জনসমাগম ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে তাৎক্ষণিক কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি পুলিশ। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আটকে দেয় বিক্ষোভকারীরা।

ঘটনার পর প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ মামলা করে। ডেইলি স্টারের মামলা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ শেষে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িতদের থানা পুলিশ, ডিবি, সিটিটিসি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সিসিটিভি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শনাক্তে কাজ করছে।

নজরুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত থানা পুলিশ ১৩ জন, সিটিটিসি ৩ জন এবং ডিবি ১ জনসহ মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সহিংসতায় জড়িত ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মো. নাইম (২৬) দেড় লাখ টাকা লুট করেছেন। সেই টাকা দিয়ে সে টিভি ও টাচ স্ক্রিন ফ্রিজ কিনেছে। তার কাছ থেকেই ৫০ হাজার টাকা, টিভি ও ফ্রিজ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যরা হলেন- আকাশ আহমেদ সাগর, মো. আব্দুল আহাদ, বিপ্লব, নজরুল ইসলাম মিনহাজ, মো. জাহাঙ্গীর, সোহেল রানা, মো. হাসান, রাসেল ওরফে শাকিল, আব্দুল বারেক শেখ ওরফে আলামিন, রাশেদুল ইসলাম, সোহেল রানা ও শফিকুল ইসলাম।

গ্রেপ্তারদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আমি খুঁজতে চাচ্ছি না। এরা দুষ্কৃতিকারী। তারা আইন ভঙ্গ করছেন। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রচলিত যে আইন, যে বিচারব্যবস্থা, সে বিচারব্যবস্থায় তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। সে যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক।

ডিএমপির এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা খোঁজার চেয়ে দুষ্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় এনে প্রচলিত বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। অপরাধী যে দলেরই হোক বা যে মতাদর্শেরই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর মতো প্রতিষ্ঠানে হামলার মোটিভ সম্পর্কে জানতে চাইলে এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি।

এ রকম যদি সংশ্লিষ্টতা থাকে আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং গ্রেপ্তারও করছি। ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছে, আরও গ্রেপ্তার হবে। কারণ ওখানে অনেক লোকজন ছিল, যারা সরাসরি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

একটা ঘটনার প্রতিবাদ করা আর এটা একটা আলাদা জিনিস। এই ঘটনার আড়ালে আমি একটা অফিসে গিয়ে আগুন দিয়ে দেব, ভাঙচুর করব, ভ্যান্ডালিজম করব- এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটা যারা করেছে, তারা খারাপ ইন্টেনশন নিয়ে করেছে। তাদেরকে আমরা অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

‘মব ভায়োলেন্স’ ঠেকাতে ডিএমপি কতটা সক্ষম- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সক্ষম। সব সময় সব ঘটনা আমরা কার্ভ করতে পারব- বিষয়টা এরকম না। কারওয়ান বাজারের যে ঘটনাটা, ওখানে যে অবস্থা ছিল, এইটার অন্তরালে আরও কিছু বিষয় আছে। আমরা যদি ওখানে অ্যাকশনে যেতাম, তাহলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেত।

পাল্টা তারা পুলিশ ফোর্সের ওপর আক্রমণ করত। আমরা জানি না যে তাদের মনের ভেতরে কী ছিল। যদি পুলিশ দুই-চারজন সদস্য আবার সেদিন নিহত হতো, তাহলে আপনারা জানেন যে পুলিশ মাত্র এক বছর আগে বিরাট ট্রমা থেকে…। আমরা তাদেরকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসছি, সামনে নির্বাচন। এই পুলিশের যদি আবার নতুন করে ক্যাজুয়ালটি হয়, এই পুলিশটাকে দিয়ে সামনে এগোতে পারব না।

তিনি বলেন, যে কারণে ওখানে আমরা অ্যাকশনে যেতে পারিনি, কোনো হিউম্যান লাইফের কোনো এক্সিডেন্ট হয়নি। এটা আমি বলব যে এত বড় একটা ইনসিডেন্টের মধ্যে আমাদের এটা একটা অ্যাচিভমেন্ট। কোনো ধরনের ক্যাজুয়ালটি ছাড়া বিষয়টাকে ট্যাকেল দেওয়া গেছে।

সম্পদ কিছু গেছে, ক্ষতি হয়েছে- সেটা হয়তো পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু একটা হিউম্যান লাইফ যখন লস্ট হয়, এটা কোনো কিছুর বিনিময়ে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। সে কারণে আমরা ওখানে অ্যাকশনে যাইনি।

সেদিন তাহলে পুলিশ কোনো অ্যাকশনেই যায়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অ্যাকশনে গেছি, যতটুকু আমরা প্রয়োজন মনে করেছি, যতটুকু আমাদের অবস্থা ছিল। অ্যাকশন যেটা সর্বোচ্চ- গুলি করা পর্যন্ত যেতে পারতাম। কিন্তু আমরা সেটা এভয়েড করার চেষ্টা করেছি। কারণ যে পরিমাণ ওখানে জনবল ছিল, পাবলিক ছিল চার-পাঁচ হাজারের মতো। এখানে আমার ৫০–১০০ জন ফোর্স নিয়ে অ্যাকশনে গেলে আমার পুলিশ এবং পাবলিক- দুই পক্ষেই ক্যাজুয়ালটি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘স্থান-কাল-পাত্র ভেদে’ পুলিশ অ্যাকশনে যায়। ইচ্ছা করলেই সব জায়গায় ফায়ার ওপেন করতে পারে না, এটা করা উচিতও না।

ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ওখানে নানান রকম কর্মকাণ্ড ঘটেছে। পুলিশ কখন পৌঁছেছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ তো ঘটনার আগেই পৌঁছেছে। তারপর পুলিশ এটা প্রটেক্ট করার চেষ্টা করেছে। পুলিশ বাধা দিয়েছে, পারেনি। পুলিশ এক পর্যায়ে মাফ চেয়েছে যে, আপনারা এই কাজটা করবেন না। কিন্তু আমাদের অ্যাকশন নেওয়ার মতো সেখানে অবস্থা ছিল না।

গুলির আগের স্টেজ- টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড মারার মতো অবস্থাও সেখানে ‘ছিল না’ বলেও জানান তিনি।

পরে এমন কোনো ঘটনাতেও পুলিশ একইভাবে ব্যর্থ হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যদি অ্যাডভান্স ইনফরমেশন পাই, সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি, আর্মিও ফিল্ডে আছে, সবাই কাজ করছে।

এ ধরনের হামলার আগে কিছু ‘পরিচিত মুখের’ ফেসবুক থেকে ‘ইন্ধন’ দেওয়া হচ্ছে- তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা মামলায় চারটা আইন ইনক্লুড হয়েছে। এত বড় মামলা এর আগে হয়েছে কি না আমি জানি না। পেনাল কোড, স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, অ্যান্টি টেরোরিজম অ্যাক্ট- একই মামলার মধ্যে আছে। আমরা এতে অ্যাকশন নেব।

আরও গণমাধ্যমের ওপর হামলার আশঙ্কা বা হুমকি রয়েছে কি না- এ বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাছে আপাতত এরকম কোনো ইনফরমেশন নেই। তবে আমরা যদি এরকম ইনফরমেশন পাই, অবশ্যই সেটাকে কার্ভ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

ছায়ানট ও উদীচীতে হামলার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছায়ানটের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় এবং উদীচীর ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। ওটা পরে ব্রিফ করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *