শহীদ জিয়ার বিএনপির প্রার্থী এমন কেন!

Slider টপ নিউজ


ঢাকা: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তম। জিয়ার কন্ঠে স্বাধীনতার বাণী শুনেছিল স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশের মানুষ। রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর জিয়াউর রহমান সাধারণ মানুষের সাথে মিশে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েও তিনি খাল কেটেছেন। সেনাবাহিনীর পোশাক পড়ে সাধারণ মানুষের সাথে করেছেন করমর্দনও। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। জিয়ার সেই আদর্শে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান খুন হওয়ার পর তার দলের হাল ধরেন তারই পত্নী বেগম খালেদা জিয়া। জিয়াউর রহমানের ১৯ দফার আলোকে বেগম খালেদা জিয়া দল পরিচালনা করা শুরু করেন। শহীদ জিয়ার বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার পরিচালনায় ১৯৯১, ১৯৯৬(গণদাবীর মুখে স্বল্পকালীন),২০০১ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে। তার পর নানা ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে বিএনপি। ২০০৬ সালে ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর প্রায় ২০ বছর হয়ে গেলো বিএনপি ক্ষমতায় নেই। এর মধ্যে দেশের মায়ায় দেশপ্রেম ও মাতৃভূমির প্রতি দৃঢ় মমতায় নির্যাতিত হয়েও দেশ ছাড়েননি বেগম জিয়া। হারিয়েছেন তার এক ছেলেকে। আরেক ছেলে প্রায় দেড় যুগ দেশের বাইরে। এত জেল জুলুম, অত্যাচার নির্যাতন ও নিপীড়ন সহ্যৃ করেও আল্লাহ তাকে জীবিত রেখেন এখনো। বর্তমানে তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে কোমায় আছেন। ইতোমধ্যে নীতি আদর্শ ও শালীন রাজনীতিবিদ ও আপোষহীন গণতন্ত্রের কান্ডারী হিসেবে বেগম জিয়ার জন্য দল মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ যেভাবে দোয়া করছেন তাতে বেগম জিয়া বাংলাদেশের অভিভাবক হয়ে গেছেন। তিনি এখন শুধু বিএনপির খালেদা জিয়া নন, তিনি বাংলাদেশের অভিভাবক খালেদা জিয়া।

আগামী বছর ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে বিএনপি ইতোমধ্যে ২৭২ আসনে তাদের দলীয় মনোনয়ন খসড়াভাবে প্রদান করেছেন। বর্তমানে নির্বাচনী তফসিলে আছে দেশ। প্রচার প্রচারণায়ও নিষেধাজ্ঞা আছে। এরপরও বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দোয়া অনুষ্ঠানের ব্যানার টানিয়ে ভোট চাওয়াও চলছে। বেগম জিয়ার জন্য দোয়া চাওয়া অনুষ্ঠাান শেষে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবীতে মশাল মিছিলও হচ্ছে। নির্বাচনী আচরণ বিধি ভাঙতে গিয়ে বেগম জিয়ার জন্য দোয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে সব অনুষ্ঠানেই বেগম জিয়ার জন্য দোয়া হচ্ছে তবে একই অনুষ্ঠানে ভোট চেয়ে আচরণবিধিও ভঙ করা হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও মনোনয়নের দ্বন্ধে বিএনপির একাধিক গ্রুপ বেগম জিয়ার জন্য রোগমুক্তি কামনা করে পৃথক পৃথক দোয়া অনুষ্ঠানও করছেন। এর অর্থ হলো বেগম জিয়ার রোগমুক্তি কামনার পাশাপাশি অন্ত:কোন্দলের বহি:প্রকাশও ঘটানো হচ্ছে। এমনও নজীর রয়েছে যে, দখল জবরদখল বা ব্যবসা বানিজ্য দখল বা হাতবদল করার ক্ষেত্রে বেগম জিয়ার রোগ মুক্তির অনুষ্ঠান বা তারেক রহমানের ৩১ দফার লিফলেট ও আলোচনা সভাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসবই কি রাজনীতি! তবে রাজনীতিতে গণতন্ত্র থাকবে এটাই স্বাভাবিক। স্বাধীনতার স্বাধীকার, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র যখন এক সাথে চলে তখন মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কমে যাবে এটাই স্বাভাবিক আর সাম্য, মানবিক মর্যাদা তখন প্রতিষ্ঠিত থাকে। সুতরাং এই সমীকরণ চলমান থাকা অবস্থায় বৈষম্য সৃষ্টির লক্ষন নি:সন্দেহে গণতন্ত্রের জন্য খারাপ উদারহণ।

বাংলাদেশ এখনো সাংবিধানিকভাবে একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ। ছাত্র-জনতার একটি মহাবিপ্লব থেকে সৃষ্ট বর্তমান সরকার একটি সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে তফসিল ঘোষণা করেছে। সেই তফসিল চলমান থাকা অবস্থায় প্রচারণাও চলছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন দৃশ্যত কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বা নিতে পারছে না। প্রার্থীরা নিজের বা দলের নৈতিক অবস্থান থেকে আচরণবিধি প্রতিপালন করবে এটাই চাওয়া ছিল। কিন্তু সে চাওয়া পূরণ হচ্ছে না।

সম্প্রতি গাজীপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মুজিবুর রহমান একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চেয়ে তার জন্য ভোট প্রার্থনা করেন। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে দেখা যায়, মুজিবুর রহমান একটি বড় চেয়ারে বসে আছেন আর তার পাশে মঞ্চে একজন ভোটার তার পায়ের সমান্তরালে বসা। দৃশ্যটি নি:সন্দেহে বৈষম্যমূলক। একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে আইন প্রণেতা হওয়ার জন্য মঞ্চে যদি একজন ভোটার প্রার্থীর পায়ের সমান্তরালে বসে থেকে আর প্রার্থী তাকে ভোট দিতে বলেন এবং সেই ভিডিও যদি প্রার্থী নিজের ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করেন, তবে তা ভালো দেখায় না বরং রাজার রাজ্যে রাজা-প্রজার মুন্সিয়ানা দেখায়। আর যদি সেটা রাষ্ট্রপতি হয়েও খালকাটা ও সাধারণ মানুষের সাথে করমর্দন করা সাদামাটা জিয়াউর রহমানের দলের প্রার্থী হয় তাহলে সেটা কষ্ট ও আক্ষেপের। এবং সেটা বিএনপির জন্য লজ্জারও বটে।

স্থানীয় ত্যাগী বিএনপি কর্মীদের এ বিষয়ে অভিমত হলো, আওয়ামীলীগ আমলে প্রায় ২০ বছর বার বার ভোটে নির্বাচিত হয়ে কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করার পরও তিনি যদি সেবক হতে না পারেন তবে বিএনপির এমপি হয়ে কি সেবা করবেন! বিএনপির এমপি প্রার্থী হয়ে ভোটারকে পায়ের সমান্তরালে রেখে বড় চেয়ারে বসে ভোট চাওয়া দাম্ভিকতা ও অহমিকায় ভরা একটি পাকাপোক্ত প্রতিষ্ঠিত অহংকার, এতে কোন সন্দেহ নেই। বিএনপির নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের মত আওয়ামীলীগের জেল জুলুম অত্যাচার আর নির্যাতনের শিকার হলে হয়তবা মুজিবুর রহমান এমন দৃশ্যের অবতারণা করতে পারতেন না। গরীব থেকে ধনী হওয়ার গুজবী খবরগুলো তদন্ত হলে হয়ত তিনি এমন নাও হতে পারতেন। সুতরাং বৈষম্যেভরা এই দৃশ্যটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দল বিএনপির একজন এমপি প্রার্থীর জন্য বেমানান, এমনকি ভোট চাওয়ার এই দৃশ্য সংসদীয় গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও বিপ্লবের চেনতাকে অসহায় করে তুলে। তাই বিএনপির উচিত এই ধরণের দৃশ্যায়ন বন্ধ করতে দলীয় কঠোর নির্দেশনা দেয়া। আর তা না হলে শহীদ জিয়ার আত্মা কষ্ট পাবে বলে মনে করেন জিয়া প্রেমিক বিএনপির ত্যাগী কর্মীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *