কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় অতিরিক্ত চাপে কাজ করে হাঁপিয়ে উঠি এবং একটা পর্যায়ে পছন্দের চাকরিটি হয়ে যায় যন্ত্রণার কারণ। অফিসের সময় কাজ নিয়ে ভাবনা হয়তো আপনার কাজকে এগিয়ে দেবে। কিন্তু অফিসের সময়ের বাইরেও যদি কাজ নিয়েই ভাবতে থাকেন তাহলে সেটি স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অবনতি ঘটাবে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কে। এ ছাড়া উদ্বেগের কারণে আপনার অফিসে কাজের মানও খারাপ হয়ে যেতে পারে। আসুন জেনে নেই, কীভাবে এই বাড়তি চাপ মোকাবেলা করে নিজের মানসিক স্থিতি বজায় রাখবেন।
খুঁজে বের করুন অতিরিক্ত চাপ এর কারণ
আমরা কাজ করতে করতে গলদঘর্ম হয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে, একের পর এক কাজের চাপ। কিন্তু এটি আসলে কী সেটি বুঝতে হবে আগে। অর্থাৎ চাপটি কি পরিবেশ থেকে আসছে, আমার নিজের চিন্তার অতিরিক্ত কোনো ফল, আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রভাব, নাকি কাজ ব্যবস্থাপনার অভাব বা অন্য কোনো কিছু।
কাজ ব্যবস্থাপনার জন্য নিজেকে তৈরি করুন
সঠিক সময়ে কোনো কাজ শেষ করতে না পারলে নতুন নতুন কাজ সংযুক্ত হলে সেটি মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। তাই সঠিকভাবে কাজ ব্যবস্থাপনার জন্য নিজের দক্ষতা ও শিক্ষাকে আরও শাণিত করতে হবে। নিত্য নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে এর প্রয়োগ করতে হবে। যেমন আগে হয়ত শুধুমাত্র ব্যক্তি বিশেষে ফাইল আলাদা রাখতেন, এখন বিষয় ও ব্যক্তি ভিত্তিক দুই রকম ফাইল রাখছেন। এরকম অনেক কাজ আছে যা কাজের সুবিধার্থে নতুন করে নিজেকে তৈরি করার মানসিকতা রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও পুরনো কর্মী যেমন নতুনদের সহযোগিতা করবেন, তেমনি নতুনদের থেকেও অনেক নতুন করে জানার ও বুঝার মানসিকতা রাখুন। এছাড়াও নিজে অংশ নিন ও কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করুন বিভিন্ন কর্ম বিষয়ক ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের আয়োজনে।
অফিসের পথে গান শুনুন, বই পড়ুন
অফিসে ঢুকেই আপনাকে অনেক কাজ করতে হবে! এই ভাবনা থেকে মুক্তি পেতে প্রথমেই যেই কাজটি করতে পারেন সেটি হলো- অফিসে যাওয়ার পথে বাস বা ট্রেনে বসে পড়ে ফেলতে পারেন পছন্দের কোনো বই। অথবা হেড ফোন কানে লাগিয়ে শুনে নিতে পারেন পছন্দের কোনো গান। এগুলো কাজের চাপের ভাবনা থেকে আপনাকে হাজার মাইল দূরে নিয়ে যাবে। কাজ শুরুর আগে মনকেও বেশ ফুরফুরে করে দেবে।
নিজেকে সময় দিন
সারা দিনের ব্যস্ততার মাঝেও নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখুন। ৩০ মিনিটের জন্য একদম একা হয়ে যান। সম্ভব হলে একটি চমৎকার গোসল (শাওয়ার) নিন। নিজের পছন্দের কাজ করুন।
উদ্বেগ ঝেড়ে ফেলুন
যদি আপনার অফিসের কাজের সময় সকাল বেলা হয় তাহলে বিকালের দিকটায় অবসর থাকার চেষ্টা করুন। এ সময় শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন এবং পেশির ব্যায়াম করুন। এই দুটো বিষয় কাজের উত্তেজনা থেকে রেহাই দিতে সাহায্য করবে আপনাকে।
হাত ধুয়ে আসুন
অফিসের কাজের সময় হয় তো শেষের দিকে। তখনো আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে মিটিংয়ের কথা বা অন্য কারো সঙ্গে যেসব কথা হয়েছে সেগুলো দুশ্চিন্তা হয়ে ঘোরাঘুরি করছে আপনার মাথায়। যদি এমনটাই হয়, তবে চটপট সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আসুন, কাজে দিতে পারে। গবেষকরা বলেন, ‘বিষয়টি ব্ল্যাকবোর্ড থেকে পুরনো জিনিস মুছে ফেলার মতো কাজ করে।’
খেতে বসে কাজ নিয়ে আলোচনা নয়
কাজের উদ্বেগ অনেকটা বরফের বলের মতো। এটা সারাক্ষণ তার শীতল পরশ দিতে চাইবে। অনেকেই রাতের খাবারের সময় হয়তো বন্ধু বা সঙ্গীর সঙ্গে অফিসের কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এটা না করাই ভালো। খাওয়ার সময় কেবল খাবারের দিকেই মনোযোগ দিন।
সময়ের কাজ সময়ে শেষ
সময়ের কাজ সময়ে শেষ করুন। যখন আপনি কোনো প্রতিবেদন বা প্রকল্প তৈরি করছেন তখন সেটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করুন। কাজ জমিয়ে রাখলে চাপ বাড়বে। চেষ্টা করুন অফিসের সময়ের মধ্যেই কাজগুলো শেষ করতে। কাজ যদি বাসায় নিয়ে যান আপনার পরিবার এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দিনশেষে কাজের সফলতার স্বাদ নিন
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, দিন শেষে কয়েক মিনিট কাজের সফলতাগুলো ভাবুন। যেসব কাজ আপনি শেষ করেছেন এবং যেই কাজগুলো ভালো হয়েছে সেগুলো নিয়ে ভাবুন। একটি নোট খাতায় লিখেও রাখতে পারেন বিষয়গুলো। এটা অফিস থেকে বের হওয়ার পরও আপনাকে একটি ভালো অনুভূতি দেবে।
কাজের বাইরে অনুষ্ঠান
চমৎকার কোনো ফুটবল ম্যাচ, রোমান্টিক রাতের খাবার, বাসার কোনো পার্টি- যাই করুন না কেন অফিসের সময়ের পরে করুন। এতে সানন্দে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে পারবেন। এগুলো আপনার কাজের একঘেয়েমিকে দূর করতেও সাহায্য করবে।
ডিজিটাল শেকল বিচ্ছিন্ন করুন
অফিস থেকে বের হওয়ার পর মোবাইলে অফিসের কাজ সংক্রান্ত খুদে বার্তা, ইমেইল ও ভয়েস মেইলের বার্তা- এসব বিষয় থেকে দূরে থাকুন। এগুলো কাজের সময় শেষে হওয়ার পরও কাজের ভাবনা থেকে বিছিন্ন হতে দেয় না।
কর্মক্ষেত্রটি আপনার তাই নিত্যনতুন উদ্দীপনা ও স্বস্তি নিয়ে হোক আপনার কর্মপরিকল্পনা এটিই প্রত্যাশা।