আমাদের কি মরে প্রমাণ করা লাগবে আমরা অসুস্থ, আদালতকে দীপু মনি

Slider বাংলার মুখোমুখি


বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন কেন্দ্রিক রাজধানীর শাহবাগ থানার ঝুট ব্যবসায়ী মনির হত্যা মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (৬ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

রিমান্ড শুনানিতে সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের মৃত্যু প্রসঙ্গ টেনে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দীপু মনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। আমাদের কি মরে প্রমাণ করা লাগবে আমরা অসুস্থ ছিলাম?’

এর আগে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন কেন্দ্রিক শাহবাগ থানার এ হত্যা মামলায় দীপু মনির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক মাইনুল খান পুলক। অপরদিকে লালবাগ থানার শাওন সিকদার হত্যা মামলায় সোলায়মান সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল ফারেজ জুয়েল। আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানির জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য করেন।

শুনানির জন্য কারাগার থেকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ প্রহরায় তাদের আদালতে তোলা হয়। প্রথমে দীপু মনির রিমান্ডের শুনানি শুরু হয়। দীপু মনির পক্ষে তার আইনজীবী গাজী ফয়সাল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি আদালতকে বলেন, আমার আসামি দীর্ঘদিন ধরে হাজতে রয়েছেন। তিনি নারী হওয়ায় বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছেন। এই মামলার এজাহারে তার নাম ছাড়া কিছুই নেই। মামলার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। শুধু হয়রানির উদ্দেশ্যে তাকে এসব মামলায় জড়ানো হয়েছে। ইতঃপূর্বে তাকে কয়েকবার রিমান্ডে নেওয়া হয়। আমরা তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করছি। এ বিষয়ে আসামি কিছু বলতে চান।

পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে দীপু মনি বলেন, গত মাসের ৯/১০ তারিখে আমি অসুস্থ হওয়ায় শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে সেখানে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে অন্য হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়। গতকাল হাসপাতালে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ স্কোয়াড না থাকায় নেওয়া হয়নি। ভাবছিলাম আজকে হাসপাতালে নেওয়া হবে। কিন্তু দেখলাম আজ আমাকে আদালতে আনা হয়েছে। পুলিশ স্কোয়াডের কারণে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না, অথচ আদালতে আনা হয়েছে। আমি ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি। আমার যে চিকিৎসা দরকার সেটা পাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে ৬০টির অধিক মামলা। কিন্তু আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি না। গত এক বছরে তিনবার আইনজীবীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমাকে আদালতে নেওয়ার দিনই যেন হাজতখানায় (আদালতের হাজতখানা) আমার সঙ্গে আইনজীবীর কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়। তাহলে মামলা সম্পর্কে একটু আলোচনা করতে পারি।

এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী সাক্ষাতের সুযোগ রয়েছে। তারা জেলগেটে চাইলে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। মূলত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করছেন আসামি।

তখন দীপু মনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। এখন আমাদের কি মরে প্রমাণ করা লাগবে আমরা অসুস্থ ছিলাম?’

তখন উপস্থিত আইনজীবীরা তাদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কথা বলতে থাকেন। এ সময় সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম বলেন, এখানে লিগ্যাল আর্গুমেন্ট হচ্ছে। সবাই কি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী? তখন পাশে থাকা কয়েকজন আইনজীবী তাকে বলেন, ‘গায়ে এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে।’

প্রত্যুত্তরে সোলায়মান সেলিম বলেন, তাই বলে কি আমরা চিকিৎসা পাব না?

শুনানি শেষে দীপু মনির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে লালবাগ থানার শাওন সিকদার হত্যা মামলায় সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন আদালত। শুনানি শেষে পুলিশ প্রহরায় তাদের আবার আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়।

মনির হত্যা মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শেষ দিন অর্থাৎ ৫ অগস্ট শাহবাগ থানার চানখারপুল এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. মনির। দুপুরে আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রোজিনা আক্তার গত ১৪ মার্চ শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ৩৫১ জনকে এজাহারনামীয় ও ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

শাওন সিকদার হত্যা মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই বিকেলে রাজধানীর ইডেন কলেজের সামনে দিয়ে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শাওন। এ ঘটনায় আত্মীয় পরিচয়ে গত ২১ জানুয়ারি মামলা করেন ইকবাল মজুমদার তৌহিদ। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনকে আসামি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *