চট্টগ্রাম : প্রাক প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় নগরীর সকরারি সিটি কলেজ কেন্দ্রে ঢুকে এক ছাত্রলীগ নেতা ব্যাপক দাপট দেখিয়েছেন। জোরপূর্বক শিক্ষক নিয়োগ কেন্দ্রের কক্ষে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নের ছবি তোলায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নিজ কলেজের শিক্ষকদেরও লাঞ্ছিত করেছেন ওই ছাত্রলীগ নেতা। যদিও শেষ পর্যন্ত দায়িত্বরত নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট ওই ছাত্রলীগ নেতার মোবাইল ফোনটি জব্দ করেছে। ঘটনার ব্যাপকতায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতা হচ্ছেন-নগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি নোমান চৌধুরী এবং সরকারি সিটি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘প্রাক প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সিটি কলেজ কেন্দ্রে জোর পূর্বক পরীক্ষার কক্ষে প্রবশে করে প্রশ্নপত্রের ছবি তোলে ছাত্রলীগ নেতা নোমান। এসময় দায়িত্বরত শিক্ষকরা তাকে বাধা দিলে সে তাদের লাঞ্ছিত করে। পরে তার কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি জব্দ করে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পুলিশকে দেয়া হয়েছে। পরে এটি নিয়ে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকে ব্যাপক হট্টগোল করে। বিষয়টি সরদঘাট থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে, তারা যেন এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় সরকারি সিটি কলেজ কেন্দ্রে নগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি নোমান চৌধুরী জোরপূর্বক একটি কক্ষে ঢুকে একজন পরীক্ষার্থীর প্রশ্ন পত্রের ছবি নিজ মোবাইলে তোলার চেষ্টা করেন। এসময় দায়িত্ব শিক্ষক ও পুলিশ সদস্যরা তাকে বাধা দিতে চাইলে তিনি তাদেরও লাঞ্ছিত করেন। এরপরও শিক্ষকরা তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে দায়িত্বরত নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটকে দেন। এখবর পেয়ে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম রাশেদ চৌধুরীসহ ছাত্রলীগের ১০-১২ জনের একটি দল এসে পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যাপক হট্টগোল করে। একপর্যায়ে তারা ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের সাথে বিতন্ডায় জড়ায়।
অন্যায় করেও থামেননি ওই ছাত্রলীগ নেতা। পরবর্তীতে পরীক্ষা শেষে নোমান ও রাশেদের নেতেৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হালিমের কক্ষে প্রবেশ করে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা প্রদান ও নোমানের মোবাইল ফোন জব্দ করার বিষয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তারা জয় বাংলা স্লোগানও দেন। এখবর পেয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, নগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (কোতোয়ালী) মাঈনুদ্দীনসহ পুলিশ ও র্যাবের বেশ কয়েকটি ফোর্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে এঘটনার পরও পরীক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করে কঠোর নিরাপত্তায় খাতা নিয়ে গেছে জেলা প্রশাসন।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (কোতোয়ালী) মাঈনুদ্দীন বাংলামেইলকে বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রলীগ নেতারা প্রবেশ করে প্রশ্নপত্রের ছবি তোলা নিয়ে শিক্ষক-ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সাথে বাকবিতন্ডা বাঁধে। পরে জেলা প্রশাসকসহ আমরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। ছাত্রলীগ নেতার মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে।’
এদিকে জেলা প্রশাসক পুলিশকে এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও এসি মাঈনুদ্দীন বলছেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটা কে করবে। ঘটনাস্থল থেকেও এঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। এখন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।