ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা, উপকূলজুড়ে জেলেদের দীর্ঘশ্বাস

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

মা ইলিশ সংরক্ষণে আগামী ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এ খবরে উপকূলজুড়ে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেমে এসেছে হতাশার ছায়া।

ভরা মৌসুমেও নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরে আশানুরূপ ইলিশের দেখা মিলছে না। প্রতিবছর এ সময়ে নদী-সাগরজুড়ে ইলিশের ছড়াছড়ি থাকলেও এবার জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত মাছ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাজারো জেলে পরিবার। নিষেধাজ্ঞার কারণে শুধু জেলেরাই নয়, ক্ষতির মুখে পড়বেন আড়তদার, ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাজারের মাছ বিক্রেতারাও। অনেকেই পেশা পরিবর্তনের কথাও ভাবছেন।

স্থানীয় জেলেরা বলছেন, সাগরে বা নদীতে ইলিশ থাকলেও আগের মতো আর ধরা পড়ছে না। সম্প্রতি কিছু সময় মাছ পেলেও নিষেধাজ্ঞার খবরে আবারও তাঁরা হতাশ। গত বছর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল ১২ অক্টোবর থেকে, কিন্তু এ বছর তা এগিয়ে আনা হয়েছে ৩ অক্টোবর থেকে। ফলে সংশ্লিষ্টরা তারিখ পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছেন।

হাতিয়ার বিভিন্ন ঘাট থেকে প্রতিদিন হাজারো জেলে নদী ও সাগরে মাছ ধরতে গেলেও অনেক সময় খালি জাল টেনে ফিরতে হচ্ছে। যেসব নৌকায় অল্প ইলিশ ধরা পড়ছে, তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরি ও জ্বালানির খরচই মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে চরম অর্থকষ্টে পড়েছেন জেলেরা। বাজারেও ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে হু-হু করে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল আসাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে হাজারো জাল, বিশেষ করে নিষিদ্ধ কারেন্ট, মশারি ও ফাঁদ জালের কারণে ইলিশ ঝাঁক বেঁধে ওপরে উঠতে পারে না। ফলে আগের মতো মাছ ধরা যাচ্ছে না।

মৎস্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ দ্বীন ইসলাম মাঝি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবার চালানো এখন ভীষণ কষ্টকর হয়ে গেছে। শুধু জেলেরাই নয়, কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরাও। ইলিশের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী, আড়তদার এবং স্থানীয় বাজারের বিক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক আড়তদার ঋণ করে নৌকা ও জাল কিনেছিলেন, এখন ঋণ শোধ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন।

চেয়ারম্যান ঘাটের আল্লার দান মৎস্য আড়তের স্বত্বাধিকারী মো. আকবর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভরা মৌসুমেও ইলিশের আকাল জেলেদের জীবনে বড় কষ্ট ডেকে এনেছে। জেলে, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও শ্রমিক সবাই ঋণের বোঝায় জর্জরিত। কেউ কেউ ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন, অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। কিছু ইলিশ যখন ধরা পড়া শুরু হয় তখনই সরকার নিষেধাজ্ঞা দেয়। আমরা চাই তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হোক এবং ভারত ও বাংলাদেশ একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করুক। নইলে তারা আমাদের এলাকায় এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই।

হাতিয়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফাহাদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডুবোচর, প্রতিকূল আবহাওয়া, অতিরিক্ত মাছ শিকার এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে ইলিশের প্রজনন ও মজুদে প্রভাব পড়তে পারে। সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মা ইলিশ রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আশা করি এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে নদী ও সাগরে বড় ইলিশের প্রাচুর্য বাড়বে। তখন জেলেরা আরও বেশি মাছ ধরতে পারবেন, যা তাঁদের জীবনে স্বস্তি আনবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *