১৮ জনের প্রাথমিক দল। জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রস্তুতির প্রথম দিনটা তবু কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা। ওয়ার্মআপের সময় গুনে গুনে ১১ জন খেলোয়াড়কে পাওয়া গেল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। এঁদের একজন যেন থেকেও নেই!
সেই একজন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ডেঙ্গুর ধকল এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কের প্রতিটি পদক্ষেপ তাই সীমাবদ্ধ। জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম দিনের অনুশীলন অবশ্য এ রকমই হওয়ার কথা। ১৮ জনের ছয়জনই কাল পর্যন্ত ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘এ’ দলের সঙ্গে। ১ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা তাঁদের। সাকিব আল হাসান যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর ফেরার কথা আগামীকাল। এই সাতজনের অনুপস্থিতি আর মাশরাফির থেকেও না থাকার কারণেই অনুশীলনের প্রথম দিনটাকে জমজমাট লাগেনি।
তবে এটা শুধুই দূর থেকে দেখা উপলব্ধি। নইলে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তো প্রথম দিনেই সবাইকে সিরিয়াস অনুশীলনে নামিয়ে দিলেন! অন্যান্য সিরিজে যেমন দেখা গেছে, অনুশীলনের প্রথম দু-একদিন ফিটনেস ট্রেনিংই বেশি হয়। জাতীয় লিগের সুবাদে এবার সবাই খেলার মধ্যে থাকায় সেটার প্রয়োজন হলো না। ওয়ার্মআপের পরপরই ইনডোরে শুরু হয়ে গেল ব্যাট-বলের অনুশীলন। তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিমরা ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে বেশ খানিকটা সময় মাঝ উইকেটে বড় শট খেলারও অনুশীলন করে নিলেন।
প্রথম দিনের অনুশীলনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলা যায় তাসকিন আহমেদের পূর্ণ গতির বোলিংয়ে ফেরাটাকে। চোট কাটিয়ে ওঠার পর পাঁচ দিন ধরে মিরপুরে বোলিং অনুশীলন করছেন তাসকিন। তবে পুরো জোর দিয়ে বল করছেন দুদিন হলো। তাতে কোনো সমস্যা না হওয়ায় জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন তরুণ এই পেসার, ‘এখন আর চোট নেই। ব্যথা ছাড়াই বোলিং করছি। আমি আত্মবিশ্বাসী, খেলার সুযোগ পেলে অবশ্যই ভালো করব।’
তাসকিনের চোটটা ছিল শরীরের এক পাশের মাংসপেশিতে। এই চোটে এ নিয়ে দুবার পড়লেন। এবারের চোট থেকে তাঁর উপলব্ধি, আগেরবার হয়তো মাঠে ফেরার ক্ষেত্রে একটু তাড়াহুড়োই করে ফেলেছিলেন। চোট পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার আগেই জোর খাটিয়েছেন শরীরের ওপর। চোটটা নতুন করে ফিরে আসার সেটাই কারণ মনে হচ্ছে তাসকিনের। তবে এবার অনেক সতর্ক তিনি, ‘গত পাঁচ সপ্তাহ ভালোমতো রিহ্যাব করেছি। এখন আর সমস্যা নেই। পুরো ছন্দে বোলিং করছি।’
‘এ’ দলের সঙ্গে ভারত সফরে গিয়েছিলেন দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে ফেরার স্বপ্ন নিয়ে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ হলে টেস্ট খেলবেন—এমন আশা ছিল মনে। সেটা আর হলো না। বেঙ্গালুরুতে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে প্রথম ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলতে নেমেই পড়লেন চোটে, সফর অসমাপ্ত রেখে ফিরে এলেন দেশে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ হলেও তাই এ যাত্রা টেস্ট অভিষেক সম্ভব হতো না তাসকিনের। তবে মনের মধ্যে স্বপ্নের বসবাস এখনো আছে, ‘টেস্ট খেলতে না পারলে কোনো ক্রিকেটারেরই পূর্ণতা আসে না। আমারও স্বপ্ন টেস্ট খেলা। শুধু টেস্ট নয়, সব সংস্করণই নিয়মিত খেলা। এখন পরিশ্রম আরও বাড়িয়ে দিয়েছি, সুযোগ এলে অবশ্যই পারব।’
চোট কাটিয়ে তাসকিন বোলিংয়ে ফিরলেও মাশরাফির খেলায় ফেরার প্রক্রিয়া এখনো জিম-রানিংয়েই সীমাবদ্ধ। কাল রাতে মুঠোফোনে বলছিলেন, ‘দুর্বলতা এখনো পুরোপুরি যায়নি। তবে অন্য কোনো সমস্যা নেই। শুনেছি এসব ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই শরীর ছন্দ ফিরে পায়। সে অপেক্ষাতেই আছি।’
একই অপেক্ষায় বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমও। সিরিজ কাছে চলে আসছে। অধিনায়ককে তো এখন সবকিছুতেই সঙ্গে পেতে চাইবে সবাই!