বদলে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের বর্তমান পদ্ধতি। বর্তমান ব্যবস্থায় বেসরকারি নিবন্ধন সনদ পাওয়া যে কোনো শিক্ষককে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়োগ দেয়। নতুন পদ্ধতিতে, সরকারের উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে মেধা তালিকা প্রণয়ন করা হবে। এ তালিকা থেকেই নিয়োগ দিতে হবে। কেবল নিয়োগপত্র ইস্যু করবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি। এই মেধা তালিকা মাত্র তিন বছরের জন্য কার্যকর থাকবে। বর্তমানে কেউ একবার নিবন্ধন সনদ লাভ করলে তার মেয়াদ থাকে আজীবন। এ ব্যবস্থা বাতিল করা হচ্ছে। এ ছাড়া, নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস নম্বর রাখা হবে ৪০।
নতুন এই পদ্ধতির প্রবর্তন করতে এরই মধ্যে ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা, ২০০৬’ সংশোধন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২১ অক্টোবর শিক্ষা সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এ বিধিমালার সংশোধনী প্রকাশিত হয়েছে।
নতুন নিয়মে, আগে থেকেই উপজেলা পর্যায়ের বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা থেকে শূন্য পদের তালিকা নিয়ে শিক্ষকের চাহিদা সংগ্রহ করবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলা এবং জাতীয়ভিত্তিক মেধাক্রম অনুসারে ফলের তালিকা প্রকাশ করবে তারা।
নতুন এ ব্যবস্থার কারণে শিক্ষক নিয়োগে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতা খর্ব হলো।
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের নতুন পদ্ধতির বিষয়ে গত ১৪ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এসব বিষয়ের সঙ্গে মন্ত্রী এনটিআরসিএ’র পরিবর্তে শিক্ষক নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন। নতুন এই বিধিমালার সংশোধনীতে ওই কমিশন গঠনের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।
সংশোধিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর নভেম্বর মাসের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ ও বিষয়ভিত্তিক শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ করবে।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তালিকা প্রণয়ন করে অক্টোবর মাসের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দাখিল করবেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ তালিকার সঠিকতা যাচাই করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। কর্তৃপক্ষ এ তালিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা নেবে।
সংশোধনের আদেশে বলা হয়েছে, আবশ্যিক বিষয়গুলোতে এমসিকিউ (বহু নির্বাচনী) পদ্ধতিতে প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রিলিমিনারি টেস্টে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ঐচ্ছিক বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। ঐচ্ছিক বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
কর্তৃপক্ষ এলাকা, বিষয় ও পদভিত্তিক শিক্ষকের শূন্যপদের ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুযায়ী ঐচ্ছিক বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা নির্ধারণ করবে।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১০০-এর মধ্যে নূ্যনতম পাস নম্বর হবে ৪০। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলা এবং জাতীয়ভিত্তিক মেধাক্রম অনুসারে ফলের তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় আলাদাভাবে ১০০ নম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ নম্বর না পেলে প্রার্থী কোনো মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
এতে আরও বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ প্রিলিমিনারির ফল পরীক্ষা নেওয়ার ২০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে এ সময় আরও ১০ দিন বেশি হতে পারে। ঐচ্ছিক বিষয়ে লিখিত পরীক্ষার ফল পরীক্ষা গ্রহণের ৪৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সময় আরও ১৫ দিন বৃদ্ধি করা যাবে। মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।
এ ছাড়া পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের শিক্ষক নিবন্ধন রেজিস্ট্রারে বা ডাটাবেজে নিবন্ধন করবে ও তিন বছর মেয়াদি প্রত্যয়নপত্র দেবে।