যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যে ৩৫% শুল্কের ছোবল, বিপদে বাংলাদেশি রপ্তানি খাত

Slider জাতীয়

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ায় ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে ৯ জুলাই থেকে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ১ আগস্ট থেকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে শুল্ক হার কমতে পারে, অন্যথায় ঘোষিত হার কার্যকর হবে।

তিন মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্র সব দেশের পণ্যের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এবার নতুনভাবে আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক পূর্বের শুল্ক হার ছাড়াও প্রযোজ্য হবে।

৭ এপ্রিল জারি করা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, নতুন এই হার আগের শুল্কের ওপর অতিরিক্ত হিসেবে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ, আগে বাংলাদেশি পণ্য যেই শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করত, তার সঙ্গে ৩৫ শতাংশ যোগ হবে।

ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আদায় হয়েছে। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। আগামী ১ আগস্ট এটি কার্যকর হলে দেশের রপ্তানি খাতের ওপর বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ভেবেছিলাম শুল্ক ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকবে। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, সেটা খুবই চিন্তার বিষয়। যেসব কারখানার রপ্তানির ৫০ শতাংশ বা তার বেশি যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর, সেসব প্রতিষ্ঠান বেশি বিপদে পড়বে।

মাহমুদ হাসান খান নতুন এই শুল্ক পরিস্থিতিকে তৈরি পোশাক খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় একক বাজার। শুরু থেকেই আমরা সরকারকে বলেছি যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে। আমরাও নিজেদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তার প্রস্তুতি রেখেছি। কিন্তু শুল্ক নিয়ে আলোচনার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়নি। বরং শুধু আশ্বাসই দেওয়া হয়েছে যে, সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে, দেশের স্বার্থে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ এখন কেবল আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে। এজন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অধীন অটেক্সা (অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ২২২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ২৭ হাজার ৮৪ কোটি টাকার সমান। এ সময়ের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৬৪ শতাংশ বেশি। মার্কিন বাজারে শীর্ষ ১০ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিই ছিল সবচেয়ে বেশি।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, নতুন শুল্ক যদি বহাল থাকে, তাহলে অনেক বাংলাদেশি পোশাক কোম্পানিকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হতে পারে। কিছু পণ্যে এ হার ৬০ শতাংশও ছাড়িয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রধান রপ্তানি বাজার। শুল্ক কার্যকর হলে অনেক মানুষ চাকরি হারাতে পারেন, শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রুবেল মনে করেন, এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বাড়াতে হবে, উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে হবে এবং বোঝাতে হবে—বাংলাদেশি তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্যের গুরুত্ব কতটা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৮.৩৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং সেখান থেকে ২.২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *