জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মহলের প্ররোচনায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) জাতীয় সংসদ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করছে’। টিআইবির আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘তাদের আয়ের উৎস সম্পর্কে মানুষ জানতে চায়। তাদের টাকা কোথা থেকে আসে তা তদন্ত করা উচিত।’
সোমবার সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে চিফ হুইপ এসব মন্তব্য করেন।
গত রোববার ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। জাতীয় সংসদের কার্যক্রম নিয়ে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন চিফ হুইপ। এতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, হুইপ ইকবালুর রহিম ও মাহবুব আরা গিনি উপস্থিত ছিলেন।
চিফ হুইপ বলেন, ‘সম্প্রতি দুজন বিদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। তাজিয়া মিছিলে হামলায় একজন মারা গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে টিআইবি এ প্রতিবেদন দিয়েছে এবং সংসদ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছে।’
আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘জাতীয় সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে’- মন্তব্য করার অধিকার তাদেরকে (টিআইবি) কে দিয়েছে? এমন মন্তব্যে সংসদ ও সংবিধানকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।’ টিআইবিকে নাচের পুতুল আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রভুদের সুতার টানেই তারা নাচে।’
আন্তর্জাতিক মহল কারা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিরোধীতা করেছে। পরবর্তীতে নানা সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক শিষ্টাচার সঠিকভাবে মেনে চলতে পারেনি। তারাই এসব কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে।’
‘সংসদ অকার্যকর নয়’ মন্তব্য করে চিফ হুইপ বলেন, ‘সংসদ ভালোভাবে চলছে। এখন সংসদে চেয়ার ভাংচুর করা হয় না এবং কোনো গালিগালাজ নেই। দেশের উন্নতি হচ্ছে।’
আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এমপিদের অংশগ্রহণ কম এবং সরকারি দলের ২৭৬ জন সদস্য থাকার পরেও কোরাম সংকটের বিষয়ে টিআইবির পর্যবেক্ষণের জবাবে চিফ হুইপ বলেন, ‘বিল সংসদে পাস হওয়ার আগে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়। এরপর সুপারিশ আকারে সংসদে বিবেচনার জন্য উত্থাপন করলে সেখানে সরকারি দলের সদস্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ কম থাকে। বিরোধীদলের সদস্যরাই মূলত তখন বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তাদের মতামত দিতে পারেন। যেসব সংসদ সদস্যরা সময়মত অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত হন না তাদের এবিষয়ে আরো সতর্ক ও যত্নবান হওয়া উচিত।’
সংসদীয় কমিটির সদস্যদের ব্যবসায়িক স্বার্থ সংশিষ্ট বিষয়ে টিআইবির পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এধরণের সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই। কোনো ধরণের অভিযোগ ওঠার আগেই কয়েকটি সংসদীয় কমিটি পূনর্গঠন করা হয়েছে। এধরণের তথ্য পেলে অবশ্যই ওই সদস্যকে সরিয়ে দেওয়া হবে।’
চিফ হুইপ বলেন, ‘সংসদে একটি দল উপস্থিত নেই, অথচ তাদের নিয়ে সংসদে সমালোচনা হয়েছে নবম সংসদের চেয়ে নয়গুণ বেশি বলে টিআইবি উল্লেখ করেছে। এক্ষেত্রে দোষের কী? বিএনপি সংসদের বাইরে বসে সংসদের সমালোচনা করবে, গাড়ি পোড়াবে, মানুষকে পুড়িয়ে মারবে, মৌলবাদীদের দোসর হিসেবে কাজ করবে, বিদেশিদেরকে হত্যা করবে, সংসদকে অবৈধ বলবে এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করবে।’ এসবের জবাবে সংসদে ওই দলটি নিয়ে কথা বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে কি-না তা জানতে চেয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি।