ঈদের ষষ্ঠ দিনে এসেও ভিন্ন রূপে ঢাকা

Slider বাংলার মুখোমুখি

ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৫ দিন আগে। ঈদের ষষ্ঠ দিনে এসেও ভিন্ন এক রূপে ঢাকা। ঈদের তৃতীয়, চতুর্থ দিনে এসে রাজধানী ঢাকা তার স্বরূপে ফিরে আসত বিগত প্রত্যেক ঈদের ছুটি শেষে। কিন্তু এবারের চিত্রটা যেন একেবারে ভিন্ন।

ঈদের ষষ্ঠ দিনে এসেও রাজধানীর সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা, বেশিরভাগ দোকানপাট এখনো খুলেনি, ফুটপাতে নেই চাকরিজীবী, কর্মজীবী মানুষের ছুটে চলা। পর্যাপ্ত যানবাহনও নেই, অল্প সংখ্যক কিছু দোকান খোলা থাকলেও সেখানে ক্রেতার উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

অল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে থেমে থেমে চলছে রাজধানীর গণপরিবহনগুলো। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে সারিসারি সিএনজি, ব্যাটারি চালিত রিকশা। এসব পরিবহনগুলো তেমন যাত্রী পাচ্ছে না। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে রাইট শেয়ারিং করা প্রচুর পরিমাণে বাইকার অন্য সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও এই ঈদের সময় তাদের সংখ্যা একেবারেই হাতেগোণা। সব মিলিয়ে ঈদের ষষ্ঠ দিনে এসেও এমন ফাঁকা ঢাকার চিত্র অনেকদিন দেখেনি অনেকেই। গত ৪ জুন অফিস শেষে টানা ১০ ছুটি শুরু হয়েছে। কোনো ঈদে এর আগে এত লম্বা ছুটির স্বাদ পায়নি চাকরিজীবীরা। ফলে জীবিকার তাগিদের যারা ঢাকায় থাকে, ঈদের ছুটি শেষে তাদের কর্মস্থলে ফিরতে আরও ২ দিন সময় লাগবে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে স্বরূপে ফিরতে শুরু করবে ব্যস্ত ঢাকা।

ঈদ মানেই উৎসব, আর ঢাকায় ঈদ মানেই বিপরীত এক অভিজ্ঞতা যা ঈদের ষষ্ঠ দিনেও রয়ে গেছে। ঢাকার ঈদ মানে অনেকটাই নিস্তব্ধতা, নির্জনতা মিলিয়ে এক অন্যরকম শহর। এ বছর ঈদুল আজহার ১০ দিনের লম্বা ছুটিতে ঢাকাবাসী যেন শহরকে ছেড়ে দিয়েছে নিঃশব্দ এক বিরল বিরতিতে। ফলে রাজধানী এখন এক বিস্ময়কর দৃশ্যপটে দাঁড়িয়ে, যেখানে নেই চিরচেনা যানজট, নেই অফিসগামী মানুষের হুড়োহুড়ি, আর নেই ব্যস্ত দোকানপাটের স্বরূপ। এ যেন ঢাকা শহরের এমন এক রূপ, যা সারাবছর কল্পনাতেও আসে না।

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এক অদ্ভুত নীরবতা। যে রাস্তাগুলোতে সাধারণত সকাল মানেই গাড়ির দীর্ঘ সারি, হর্নের প্রতিযোগিতা আর মানুষের ঢল—সেগুলো এখন ধু-ধু করছে। গণপরিবহনগুলো বেশিরভাগই ফাঁকা, রাস্তার পাশের দোকানপাটও অধিকাংশ বন্ধ।

ফার্মগেট থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রিকশায় যাওয়া আগারগাঁওয়ের এক বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ২০ বছর ধরে ঢাকায় থাকি। ঈদের কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এমন ফাঁকা ঢাকা আগে দেখিনি। আগে ঈদের তৃতীয় দিনেই ঢাকায় ব্যস্ততা ফিরে আসতো, কিন্তু আজ ঈদের ষষ্ঠ দিন তবুও এমন ফাঁকা ঢাকা। আসলে এবার ঈদে ১০ দিনের ছুটি পেয়েছে চাকরিজীবীরা, ফলে তারা এখনো ঢাকায় ফিরে আসেনি।

রাজধানীর রামপুরায় কথা হয় সিএনজি চালক আবদুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি বলেন, সেই ভোরে বের হয়েছি গাড়ি নিয়ে। কিন্তু যাত্রী পেয়েছি মাত্র একজন। ঈদ শেষ হয়েছে সেই কবে কিন্তু এখনো ঢাকায় ফিরেনি মানুষ। পুরো ঢাকা শহরই এখনো ফাঁকা। মানুষও নেই, যাত্রীও নেই। ঈদের দিন থেকে এখন পর্যন্ত দিনের খরচ তোলাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।

একই রকম হতাশা নিয়ে কথা বলেন সাভার থেকে গাবতলী, মহাখালী, গুলশান হয়ে বাড্ডায় আসা বৈশাখি বাসের চালক নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, আগে এই রুটে এত যাত্রী থাকতো যে মানুষ বাসে ঝুলে থাকতো। এখন ১০ টা সিটও ভরে না। শুধু গাড়ি চালায় যাচ্ছি, কিন্তু আয়-রোজগার নেই। তারপরেও মালিক বলেছে গাড়ি চালাতে হবে, তাই নামছি রাস্তায়।

রাজধানীর মহাখালী এলাকায় ট্র্যাফিক পুলিশের দায়িত্বপালন করা মাহাফুজুর রহমান বলেন, এই সড়কে প্রতিদিন দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে তবে ঈদের দিন থেকে আজ পর্যন্ত সড়কটি একেবারেই ফাঁকা। কোনো যানজট নেই, গণপরিবহনের সংখ্যা কম। তবে ধারণা করা যায় আগামী রোববার থেকে আবার আগের রূপে ফিরে আসবে ঢাকা শহর।

এদিকে কর্মব্যস্ত শহরটির ছন্দ কিছু দিনের জন্য স্তব্ধ হলেও তাতে লুকিয়ে আছে কিছু আনন্দ, কিছু অভাব আর কিছু বিরল উপলব্ধি। এমন ফাঁকা ঢাকাকে কেউ কেউ ভালোবেসে ফেলেছেন, কেউবা গুনছেন ফিরে আসার প্রহর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *