‘লাভের দরকার নেই, চালান উঠলেও গরু বিক্রি করে দেব’

Slider বাংলার মুখোমুখি


ভোলায় শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে হাটগুলো। তবে দাম নিয়ে রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অন্যদিকে পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে জেলায় এ বছর প্রায় ৭২০ কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, জেলার ৭ উপজেলায় স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৬৯টি এবং অস্থায়ী ৭৮টি। এ বছর ভোলা জেলায় কুরবানির জন্য ১ লাখ ২ হাজার ৭৬৯টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে, চাহিদা রয়েছে ৯০ হাজার ২৫৩টি। চাহিদার বিপরীতে উদ্বৃত্ত রয়েছে ১২ হাজার ৫১৬টি।

সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের শতবছরের গজারিয়া হাট ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশু নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চলছে চরম দরকষাকষি। কোনো কোনো ক্রেতা তাদের পছন্দমতো কুরবানির পশু ক্রয় করেছেন, আবার কেউ কেউ দাম কমার আশায় শেষ হাটে তাদের কোরবানির পশুটি কেনার অপেক্ষায় রয়েছেন। অন্যদিকে ক্রেতারা এখনও আশানুরূপ দাম না বলায় কিছু কিছু খামারি শেষের হাটগুলোতে তাদের পরম যত্নে লালন পালন করা পশুটির দাম বাড়বে বলে আশায় রয়েছেন।

হাটে প্রায় ৯ মণ ওজনের একটি বিশাল ষাড় বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা খামারি মো. জাহাঙ্গীর। তার ষাড়টির দাম দিয়েছেন আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতারা আশানুরূপ দাম না বলায় হতাশ তিনি।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ষাড়টি ৩ বছর ধরে লালন পালন করে বড় করেছি। বিক্রির উদ্দেশ্য হাটে নিয়ে এসেছি, কিন্তু ক্রেতারা দাম বলছেন সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ দামে বিক্রি করলে অনেক টাকা লস হবে,তাই এখনও বিক্রি করিনি। ষাড়টির আর রাখব না, বিক্রি করব। শেষের হাটগুলোতে দাম বাড়ার অপেক্ষায় রয়েছি।

খামারি মো. আনিস ও মো. রানা বলেন, বিক্রির উদ্দেশ্যে হাটে গরু নিয়ে এসেছি। কিন্তু ক্রেতারা উৎপাদন খরচ ও বলছেন না। এ বছর গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে গরুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কিন্তু গরুর দাম বাড়েনি, যা আমাদের জন্য হতাশার। লাভের দরকার নেই, চালান উঠলেও গরু বিক্রি করে দেব।

অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন ভোলার হাটগুলোতে পর্যাপ্ত গরু রয়েছে, সংকট নেই। চাহিদা বেশি থাকায় ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর দাম কিছুটা বেশি। বড় আকারের গরু তাদের সাধ্যের বাইরে।

ক্রেতা মো. দেলোয়ার ও মো. মামুন। তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোরবানির গরু কেনার জন্য গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন হাটে ঘুরেছি। হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি। দাম যা-ই হোক কোরবানির জন্য গরু কিনব। দামাদামি করছি।

ক্রেতা শাহে আলম ও আল আমিন বলেন, এ বছর গরুর দাম আমাদের সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে, সহনীয় পর্যায়ে। কোরবানির জন্য গরু কিনেছি, এতে আমরা খুশি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরুগুলো লালন-পালনের জন্য খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের আমরা সার্বিক পরামর্শ দিয়েছি। ভোলায় এ বছর ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি রয়েছে এবং কুরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে প্রায় ৭২০ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া হাটগুলোতে আমাদের ২৬টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রতিদিন কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *