বয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীদের রোগের সাধারণ লক্ষণ- অতিরিক্ত পানি পিপাসা পাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি অনুপস্থিত থাকতে পারে। তবে অনির্দিষ্ট ধরনের লক্ষণাদি- যেমন, দুর্বলতা যৌনাঙ্গে চুলকানি, প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, দ্রুত ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি থাকতে পারে- রক্তে বেশি মাত্রায় গ্লুকোজের উপস্থিতিই এটি প্রমাণ করে।
তাদের অনেকের আবার কাঁধে ব্যথাও থাকে। বয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীদের অনেককেই ডায়াবেটিসের জটিলতা (যেমন- চোখের ছানিপড়া, কিডনি ফেইলিওর, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি) নিয়ে প্রথমবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেখা যায়। বয়স্ক ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসা ক্ষেত্রেও শারীরিক শ্রম, পরিমিত ও প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ এবং এন্টিডায়াবেটিক ওষুধ প্রয়োজন হয়। তবে তাদের জন্য মধ্যবয়সীদের মতো অতটা কঠোরভাবে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ আশা না করাই ভালো। তাদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য সহযোগী রোগের উপসর্গ দূর করাই প্রধান উদ্দেশ্য। মুখে খাবার এন্টিডায়াবেটিক ওষুধগুলো তাদের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্দেশিত হতে পারে। স্থূলকায়াদের জন্য মেটফরমিন ভালো। তবে যাদের রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ সহজসাধ্য হয়ে উঠে না। যাদের কিটোনুরিয়া দেখা দিয়েছে তাদের ইনসুলিন নিতে হবে। বয়সী ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, নেফ্রোপ্যাথি, নিউরোপ্যাথি ও পায়ের ঘায়ে অধিক হারে ভুগতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
মানসিক সমস্যা
ডায়াবেটিস মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিসের কারণে কারও কারও মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে। তবে ডায়াবেটিস নিকটবর্তীর দূরবর্তীভাবে নানাবিধ মানসিক সমস্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মানসিক রোগের তীব্রতায় যারা ভুগছেন তাদের ডায়াবেটিস হলে তা নিয়ন্ত্রণ করাও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষত যাদের রক্তের গ্লুকোজ বেশি মাত্রায় থাকে। যাদের ইনসুলিন ইনজেকশন নিয়ে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বাধ্যতামুলক হয়ে দাঁড়ায়, তাদের বড় ধরনের মানসিক রোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা করতে পারে। সেসব রোগী সর্বদা অতি সংবেদনশীরতায় ভুগেন, তাদের রক্তে গ্লুকোজ ও একটু আলাদাভাবে ডায়াবেটিসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে- সাম্প্রতিককালের কিছু নতুন রিপোর্টে নবতর ওষুধ দিয়ে মানসিক রোগের চিকিৎসা করার ফলে ডায়াবেটিস ও মানসিক সমস্যার নতুন ধরনের সংশ্লিষ্টতা জানা যাচ্ছে। মানসিক রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হল যা বিশ শতকের গোড়ার দিকে ভাবা হতো, সিজোফ্রেনিয়তে রক্তের গ্লুকোজ বাড়ে। ইদানীংকালের গবেষণায়ও অনেকটা এরূপ তথ্যই পাওয়া গেছে।
এখন এটা পরীষ্কার যে, বড় ধরনের মানসিক রোগীদের একটা বড় অংশ ডায়াবেটিসে ভোগেন এবং শরীরে একই সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে। যেমন- সিজোফ্রেনিয়ার রোগীকে তার সমবয়সীদের তুলনায় অনেক বেশি সময় বিছানায় থাকতে হয় তারা কম তাজা ফলমূল খেয়ে থাকেন। এজন্য তারা বেশি করে ডায়াবেটিস ও দৈহিক স্থূলতায় ভুগেন এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। সিজোফ্রেনিয়ার রোগীদের ১৬ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছে। বয়সবৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার হারবাড়ে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যবয়সীদের দৈহিক স্থূলতা থাকলে ডিমনেশিয়া (স্মৃতিভ্রষ্টতা) হওয়ার হার বাড়ে আর বেশি বয়সে ডিমনেশিয়া বাড়ে ডায়াবেটিসের কারণে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ –