সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহরুন রুনির হত্যা মামলার ১৩ বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি আদালতে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন করে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। মূলত উচ্চ আদালতের নির্দেশে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে গেল নভেম্বর থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানের নেতৃত্বে কাজ করছে টাস্কফোর্স। তবে তারাও শোনাতে পারছে না আশার বাণী। কিন্তু যথাযথ সময়ে প্রতিবেদন দাখিলের কথা জানিয়েছে তদন্ত সংস্থাটি
জানা যায়, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন এ সাংবাদিক দম্পতি। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সুরাহা হয়নি। কবে নাগাদ মামলার তদন্ত শেষ হবে বলতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। থানাপুলিশ-ডিবি-র্যাবের হাত ঘুরে বর্তমানে মামলার তদন্তভার পেয়েছে পিবিআই। সবমিলিয়ে চার বার বদল হয়েছে তদন্ত সংস্থা। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এখন পর্যন্ত ১১৫ বার সময় নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে ওই দিন মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি.এম. ফারহান ইশতিয়াকের আদালত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ২ মার্চ ধার্য করেন।
অন্ধকারে পড়ে আছি, আশা-প্রত্যাশা কিছুই নেই
সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘অন্ধকারে পড়ে আছি। কোনো আশা-প্রত্যাশা নেই। পিবিআই তদন্তভার নিয়েছে। তারা আমার কাছে এসেছিলেন। দেখি কতদূর কী করেন? এরপর বুঝব কতদূর অগ্রসর হতে পেরেছে।’
‘তাদের (পিবিআই) একটা কথায় বলেছি, চোর বা ডাকাতির দোহায় দেবেন না। আমি এটা মেনে নেব না। চোর চুরি করতে আসলে চুরি করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাবে। আর ডাকাতরা অস্ত্র নিয়ে আসবে, তারা জানে মারবে না। এটা বলে দিয়েছি।’
সাগর-রুনির সন্তান মেঘের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় দাদি সালেহা মনিরের। মাঝেমধ্যে দাদীর সঙ্গে দেখাও করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সালেহা মনির বলেন, ‘আগেই বলেছিলাম র্যাব এ মামলার তদন্ত করতে পারবে না। তারা বারবার সময় নিচ্ছে। না পারলে তদন্ত ছেড়ে দিত। এখন অন্য সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে। দেখি তারা কী বলে?’
তিনি বলেন, ‘শুধু এতটুকু জেনে যেতে চাই, কেন-কীসের জন্য ওদের খুন করা হলো? এরপর কী হলো, না হলো (বিচার) তা জানার দরকার নেই। ছেলের কবরস্থানে এখনো যাইনি। রুনির মা তো চলে গেছে (মারা গেছে)। এখন আমি একা আছি। দেখি কী হয়, আল্লাহ ভরসা।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সালেহা মনির বলেন, ‘গত সরকার আমাদের জন্য কিছুই করেনি। আমাদের আশা— ড. ইউনূস সরকারের সময় হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হবে।’
মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘আমরা বিচার চাই। আর নতুন করে চাওয়ার কী আছে! সরকার ৬ মাস সময় দিয়েছে। অপেক্ষা করি, দেখি কী দাঁড়ায়। তবে নতুন করে চাওয়ার কিছু নেই। বিচার চায়। জানি না বিচার হবে কি না।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে এখনই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কিছু বলা যাবে না। তদন্তসাপেক্ষে আমরা যথাসময়ে প্রতিবেদন দাখিল করব।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আবু সাইদ সিদ্দিকী (টিপু) বলেন, ‘এ মামলা নিয়ে আমরা পরিশ্রান্ত। বারবার বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। আমরা পরিশ্রান্ত। এর থেকে পরিত্রাণ চাই।’
এর আগে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানাপুলিশের পর মামলা তদন্তের জন্য প্রথমে ডিবি পুলিশ, পরে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সবশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্বভার পায় পিবিআই।
মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র জামিনে আছেন। অপর আসামিরা কারাগারে।