গাজীপুর: গাজীপুর মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকার সাংবাদিকদের নির্যাতন করেছে। আমার বাবাকেও তারা নির্যাতন করে ২৮ মাস জেলে রেখেছে। আমার বাবাকে সাবেক এসপি হারুণ দ্বারা গ্রেপ্তার করিয়ে যারা হারুনের অফিসে মিষ্টি বিতরণ করেছে আমি তাদের নাম জানি। সকলকেই বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে গাজীপুরে ৩৪ জন সাংবাদিক মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার হয়ে নির্যাতিত হয়েছেন। আমি তাদের প্রত্যেকের পাশে দাঁড়াতে চাই।
মঙ্গলবার(২৮ জানুয়ারী) সকাল থেকে রাত পর্য়ন্ত গাজীপুর জেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে মহনগারীর সালনা পর্যটন রিসোর্ট এন্ড পিকনিক স্পটে “চল নির্যাতিত সাংবাদিকদের গল্প শুনি” শীর্ষক আলোচনা ও সাংবাদিক মিলন মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের কথা বলেছেন। তিনি এ জন্য ৩১ দফার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। এটি করতে হলে সংবাদিকদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হবে।
রনি বলেন, গণমাধ্যম জাতির বিবেক। কিন্তু গত ১৭ বছরে তাদের সে ভূমিকায় দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ফ্যাসিষ্ট সরকারের সময় সাংবাদিক মোজাম্মেল হক বাবু, নাঈমুল ইসলাম, ফারজানা রুপাসহ অনেক সাংবাদিক অনেক মানুষের জীবন নষ্ট করেছে। তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। পতিত প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনকে এসব সাংবাদিকরা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এসব সাংবাদিক দোষরদের মধ্যে কিছু গ্রেফতার হয়েছে, আবার অনেকে পালিয়ে গেছে, অনেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারা জার্সি বদল করে আবার অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এমনকি বিভিন্ন দলের নাম নিয়ে আবারও ষড়যন্ত্র করার পায়তারা করছে এবং তাদের পজিশন ঠিক রাখার চেষ্টা করছে, তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ডিবি হারুন গাজীপুরে থাকাকালীন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় ৩৪ জন সংবাদকর্মীদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। এসময় মিলন নামে এক সংবাদ কর্মীকে হত্যা করার কথা উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। তাঁর বাবা, অধ্যাপক এম এ মান্নানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমোর বাবাকে একবার নয়, দুই দুইবার মিথ্যা মামলায় জেলখানায় নেয়া হয়েছে। দীর্ঘ ২৮ মাস তাকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে।
বিএনপি‘র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যে পরিবর্তনের কথা বলছেন, সেখানে সংবাদ কর্মীদেরও সহযোগিতার প্রয়োজন। কারণ সংবাদকর্মীদের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা অবশ্যই প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি তার দলের নেতাকর্মীরাও কোন ধরণেল অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাদের নিয়েও সমালোচনা করতে হবে। এসময় তিনি আরো বলেন, তবে অনেকে এখনো আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করে মিথ্যা এবং অপপ্রচার চালাচ্ছে। সুতরাং তাদেরকে পরিবর্তন না করলে এই সমাজ ব্যবস্থা বিশেষ করে গাজীপুরে পরিবর্তন আসবে না বলে উল্লেখ করেন এম মঞ্জুরুল করিম রনি। এসময় তিনি বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে গাজীপুরের উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশাব্যাক্ত করেন।
আয়োজক সংগঠন গাজীপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রিপন আনসারীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডাঃ মাজহারুল আলম, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মনজুরুল করিম রনি, ডিবিসি নিউজের পরিচালক সালাউদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ সালাউদ্দিন আইউবী, গাজীপুর মহানগর জাসাসের সভাপতি সৈয়দ হাসান জুন্নুরাইন সোহেল, জাগ্রত নব্বইয়ের সদস্য সচিব ভিপি আশরাফ হোসেন টুলু, টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন, সাধারণ সম্পাদক গাজী সালাউদ্দিন, বাসন থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির, গাজীপুর মগানগর যুবদলের আহবায়ক মাহমুদুল হাসান রাজু, গাজীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুর, গাজীপুর জেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান, গাজীপুর জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ভুইয়া, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ বোরহান উদ্দিন অরণ্য, সিনিয়র সাংবাদিক বেলাল হোসেন, প্রিন্সিপাল হুমায়ুন কবীর, ডেইলী স্টারের গাজীপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক মনজুরুল হক, প্রফেসর আসাদুজ্জামান আকাশ, গাজীপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক আতিকুর রহমান আমিন, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, গাজীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সাদ, নিউজটোয়েন্টিফোর টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এফ এম কামাল হোসেন, শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এম ফারুক, দৈনিক নয়াদিগন্তের সাংবাদিক অধ্যাপক আবুল কালাম সহ গাজীপুর জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের দুই শতাধিক নেতারা অংশ গ্রহন করেন। অনুষ্ঠান শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃত অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।